Santragachi

সাঁতরাগাছি ঝিল বাঁচাতে তৈরি করা হবে নর্দমার মালা

সাঁতরাগাছি ঝিলের অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পাঁচ বছর আগে, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতে এ নিয়ে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২১ ০৬:০৭
Share:

কচুরিপানায় ঢাকা সাঁতরাগাছি ঝিলের একাংশ। নিজস্ব চিত্র।

পাঁচ বছর আগে সাঁতরাগাছি ঝিলের পাশে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি) তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ বার তাই ওই ঝিলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে সেটির চার দিকে নর্দমার মালা (গারল্যান্ড অব সুয়ারেজ) তৈরির নির্দেশ দিল আদালত। যে নর্দমার জল গিয়ে পড়বে মূল ঝিলের পাশে একটি ছোট জলাশয়ে। সেটিকে ‘অক্সিডেশন পন্ড’ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এতে খরচ যেমন কম হবে, তেমনই কাজও শেষ হবে তাড়াতাড়ি।

Advertisement

হাওড়ায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি স্টেশনের ঠিক পাশেই অবস্থিত সাঁতরাগাছি ঝিল শুধু বড় জলাশয়ই নয়, বছরের পর বছর ধরে এটি পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঠিকানাও। আলিপুর চিড়িয়াখানা এবং বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে পরিযায়ী পাখিরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও এই ঝিলে প্রত্যেক বছরই শীতের আগে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির সমাগম হয়।

অথচ, সাঁতরাগাছি ঝিলের অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পাঁচ বছর আগে, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতে এ নিয়ে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর অভিযোগ ছিল, ঐতিহাসিক এই ঝিলটির দীর্ঘদিন কোনও সংস্কার করা হয়নি। দিনের পর দিন সেখানে ফেলা হচ্ছে অপরিশোধিত বর্জ্য। ঝিলের চারপাশ চলে গিয়েছে বেআইনি দখলদারদের কব্জায়। সব চেয়ে বড় কথা, বছরের অধিকাংশ সময়ে পুরো ঝিলটি কচুরিপানায় ভরে থাকে।

Advertisement

এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঝিলটি সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ আদালতের দুই বিচারপতি, এস পি ওয়াংদি এবং বিচারপতি পি সি মিশ্র। সাঁতরাগাছি ঝিলকে একটি ঐতিহ্যশালী স্থান হিসেবে উল্লেখ করে আদালত তার রায়ে জানায়, যে নিকাশি নালাগুলি ঝিলে গিয়ে পড়েছে, ঝিলকে দূষণমুক্ত করতে হলে সেগুলি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশের পরেও কোনও কাজ না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৪ জুলাই পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয়, ঝিলে এসে পড়া সব নিকাশি নালার মুখ ঘুরিয়ে দিতে। ওই সময়েই ঝিলের পাশে একটি এসটিপি তৈরির পরিকল্পনা করতে ম্যাকিনটস বার্নকে নিযুক্ত করা হয়।

সুভাষবাবু বলেন, ‘‘আদালতের ওই নির্দেশের পরে প্রায় পাঁচ বছর কাটতে চলল। কিন্তু ঝিলে নর্দমার জল ফেলা বন্ধ করা যায়নি। তৈরি হয়নি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টও। ফলে ঝিল দূষিত হয়েই চলেছে।’’ তিনি জানান, এসটিপি তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ার মূল কারণ খরচ। প্লান্ট তৈরির জন্য যে জমি কিনতে হবে তা যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। তা ছাড়া, জমি পাওয়া নিয়েও কিছু জটিলতা রয়েছে।

সুভাষবাবু জানান, এসটিপি তৈরি করা যে হেতু ব্যয়সাপেক্ষ এবং এটি দৈনন্দিন পরিচালনার খরচ বেশি, তাই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গড়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত। গত ২৯ মে ওই কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, এসটিপি তৈরি না করে ঝিলের চারপাশে নর্দমার মালা তৈরি করা হবে। সেই নালার যাবতীয় অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলা হবে মূল ঝিল সংলগ্ন একটি ছোট জলাশয়ে। ওই জলাশয়টি ‘অক্সিডেশন পন্ড’ হিসেবে ব্যবহার করা হবে এবং সেই বর্জ্য পুরোপুরি শোধনের পরে ফেলা হবে নাজিরগঞ্জ খালে। ঠিক হয়েছে, এই নর্দমার মালা তৈরি করবে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। পুরো কাজটি দেখভাল করবে হাওড়া পুরসভা।

অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে ঝিলের চারপাশের জবরদখল হটানোর বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এমনকি, সাঁতরাগাছি স্টেশন এবং ঝিলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সবুজ বলয় তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই বর্তমানে নেওয়া পরিকল্পনা কার্যকর হতে কত সময় লাগে, এখন সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement