টলটলে: সাফাইয়ের পরে সাঁতারগাছি ঝিল। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
শীতের মরসুমে সাঁতরাগাছি ঝিলে আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বছর বছর কমছে, এমন অভিযোগ বহু দিন ধরেই করে আসছেন পরিবেশকর্মী ও পক্ষীবিদেরা। তাঁদের অভিযোগের তির মূলত রেল এবং স্থানীয় পুরসভার দিকে। আরও অভিযোগ, এলাকার বাসিন্দারা ক্রমাগত আবর্জনা ফেলে নষ্ট করছেন ঝিলটিকে। মূলত এই জোড়া সমালোচনা বন্ধ করতেই এ বার জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে শীতের বহু আগে থেকে সাঁতরাগাছি পাখিরালয়ের ঝিল পরিষ্কারের কাজ শুরু করল হাওড়া পুরসভা। একই সঙ্গে দূষণ নিয়ন্ত্রণে এলাকার বর্জ্য যাতে ঝিলে না-পড়ে, সে জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ঝিল সাফাইয়ের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ। কচুরিপানা পরিষ্কারও অনেকটা হয়ে গিয়েছে। ঝিলের মাঝে পরিযায়ী পাখিদের বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপ।
পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ ছিল, পাখিরালয়ের ঝিল সংস্কারের ব্যাপারে রেল এবং পুর প্রশাসন আদৌ আগ্রহী নয়। ঝিলের দুরবস্থা নিয়ে ২০১৬ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সোমবার সুভাষবাবু বলেন, ‘‘ওই মামলার ভিত্তিতে অবিলম্বে ঝিল সংস্কারের কাজে হাত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ আদালত। এর পরেই বর্তমান পুর কমিশনার নিজে উদ্যোগী হয়ে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করেছেন।’’
সাঁতরাগাছির এই ঝিলে আগে প্রতি শীতে ভিড় জমত পরিযায়ী পাখিদের। তাদের মধ্যে যেমন ছিল উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সারস ক্রেন, তেমনই ছিল হিমালয়ের উত্তরাংশ থেকে আসা গাডোয়াল, নর্দার্ন শোভেলার, নর্দার্ন পিন্টেল, গার্গ্যানি, কটন-পিগমি হাঁসের মতো স্থানীয় পরিযায়ী পাখিও। ঝিলে প্রচুর সংখ্যায় দেখা মিলত লেসার হুইসলিং পাতিহাঁসেরও। জলে ভেসে থাকার জন্য কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করা কয়েকটি দ্বীপ ছিল এই সব পাখির আবাসস্থল। কিন্তু গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রতি বছর পুজোর আগে ঝিল পরিষ্কারের দাবি জানিয়ে এলেও সেই কাজ হত শীতের মুখে। তা-ও অত্যন্ত দায়সারা ভাবে। ফলে কমতে শুরু করেছিল পাখির সংখ্যা। তবে এ বার পুজোর অনেক আগেই কচুরিপানার জঙ্গল সাফ করায় এবং
নিকাশি নালাগুলির জন্য আলাদা পরিকল্পনা করায় অনেক বেশি পরিযায়ী পাখি আসবে বলে আশা করছেন পুরকর্তারা।
হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এখন থেকেই এই কাজ করা হচ্ছে। কারণ, পুজো মিটলেই পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করবে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি পাখি আসে। এখন থেকে ঝিল সংস্কার করে রাখতে পারলে পাখি আসার
ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ফল মিলবে বলে মনে করছি।’’