সঙ্ঘশ্রীর খুঁটিপুজোয় কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মালা রায় এবং দেবাশিস কুমার। —নিজস্ব চিত্র।
বিরল নাটকের জন্ম দিয়ে ঠিক সাত দিন আগে শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গিয়েছিল খুঁটিপুজো। সে নাট্যরঙ্গেরই দ্বিতীয় পর্ব মঞ্চস্থ হল আজ। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সনের ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে রবিবার খুঁটিপুজো সারল সঙ্ঘশ্রী। পুজোর নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার লড়াইয়ে বিজেপি এখনও কতটা পিছিয়ে, তা স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিতে অনুষ্ঠানটা প্রায় তৃণমূলের শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ হয়ে উঠল। তবে ‘রাজনীতি’ অস্বীকার করে মমতার ভাই বললেন, ‘‘এলাকার মানুষকে ছাড়া এলাকার পুজো হয় না।’’
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুকে সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে এ বার পুজোর তোড়জোড় শুরু করেছিল কালীঘাট-রাসবিহারী এলাকার পুরনো বড় পুজো কমিটিগুলির অন্যতম সঙ্ঘশ্রী। সায়ন্তন সে প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন এবং তাঁর উপস্থিতিতেই গত রবিবার সঙ্ঘশ্রীর খুঁটিপুজো হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সে খুঁটিপুজো শেষ পর্যন্ত হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রিয় হন সঙ্ঘশ্রীর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে। যে বৈঠকে সায়ন্তন বসুকে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেই বৈঠক অবৈধ বলে কার্তিক এবং তাঁর অনুগামীরা দাবি করেন। নতুন করে বৈঠক ডাকা হয় এবং ফের কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটির আয়োজনেই আজ খুঁটিপুজো হয়েছে।
আরও পড়ুন: অজিত ডোভাল, গুপ্তচর-গোয়েন্দা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে অমিত শাহ, কাশ্মীর নিয়ে বাড়ছে উৎকণ্ঠা
এ দিনের কর্মসূচির মধ্যমণি অবশ্যই ছিলেন কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ তথা কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়, রাসবিহারী এলাকারই কাউন্সিলর তথা কলকাতার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারও এ দিন সঙ্ঘশ্রীর খুঁটিপুজোয় উপস্থিত হন। যে এলাকার পুজোর দিকে বিজেপি হাত বাড়িয়েছিল, সেখানে তৃণমূলের দুর্গ কতখানি দুর্ভেদ্য, তার প্রমাণ দিতেই এই ছবি তৈরি করা হল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত।
সঙ্ঘশ্রীর পুজো নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে যে টানাপড়েন এ বার দেখা গেল, সে দৃশ্য কলকাতায় কিন্তু খুব সুলভ নয়। পুজো কমিটির নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখা নিয়ে এর আগে কখনও শাসক ও বিরোধীর মধ্যে এই রকম প্রকাশ্য টানাপড়েন দেখা গিয়েছে কি না, অনেকেই মনে করতে পারছেন না। বিরোধী দলের এক নেতাকে একটি পুজো কমিটির সভাপতি করা হচ্ছে বলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার সক্রিয় হয়ে খুঁটিপুজো রুখে দিচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে নতুন করে খুঁটিপুজোর আয়োজন করে পুজোর নিয়ন্ত্রণ শাসক শিবির হাতে নিচ্ছে— এমন ঘটনা কলকাতায় খুব একটা দেখা যায়নি।
কিন্তু কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখছেন না। যে সায়ন্তন বসুকে সভাপতি করার চেষ্টা হয়েছিল, তিনি কে, কী তাঁর পরিচয়, এলাকার মানুষ তা জানেন না— দাবি কার্তিকের। তাঁর মতে, সায়ন্তনকে সভাপতি করা হলে সেটাই হত অস্বাভাবিক। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের কথায়, ‘‘এটা বোকামি করেছিলেন ওঁরা। যাঁরা পাড়ার লোক, এলাকার লোক, ক্লাবের লোক, তাঁদের ছাড়া কিন্তু পাড়ার পুজো হতে পারে না।’’ সায়ন্তন বসুকে সঙ্ঘশ্রীর পুজো থেকে দূরে রাখার চেষ্টার মধ্যে কোনও রাজনীতিও নেই বলেই কার্তিক মনে করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কে তৃণমূল, কে বিজেপি, কে কংগ্রেস জানি না। এলাকার মানুষকে ছাড়া এলাকার পুজো হয় না।’’
আরও পড়ুন: কুইক রিঅ্যাকশন ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করল ভারত
কিন্তু সঙ্ঘশ্রী যে পাড়ার ক্লাব, কার্তিক নিজে বা শোভনদেব-মালা-দেবাশিসরাও কি সেই পাড়ার বাসিন্দা? কার্তিকের ব্যাখ্যা— ঠিক সেই পাড়ার বাসিন্দা না হলেও, তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। তিনি নিজে ছোটবেলা থেকে সঙ্ঘশ্রীর পুজোর সঙ্গে যুক্ত বলেও কার্তিক এ দিন জানান।
যাঁকে সঙ্ঘশ্রী থেকে দূরে রাখার জন্য এত তৎপরতা, সেই সায়ন্তন বসু এ দিন তীব্র কটাক্ষে বিঁধেছেন তৃণমূলকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি শুধু যাব বলেছিলাম। তাতেই মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার, মন্ত্রী, সাংসদ, কাউন্সিলর— সবাই মাঠে নেমে পড়লেন। আমি সত্যিই পৌঁছে গেলে কী হত, বুঝতে পারছি না। তৃণমূলের এই থরহরি কম্প অবস্থাটা আমি বেশ উপভোগ করছি।’’
সায়ন্তন যা-ই বলুন, সঙ্ঘশ্রীর পুজোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে গিয়েও নিতে না পারাটা যে বিজেপির জন্য ধাক্কা, তা অস্বীকার উপায় কমই। কিন্তু বিজেপি নেতার দাবি, তৃণমূলের জন্য আরও বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে। কী রকম ধাক্কা? সায়ন্তন বললেন, ‘‘আরও ৫৪টা পুজো কমিটির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা সব রকম ভাবে সেই কমিটিগুলোকে সাহায্য করছি। এখন নাম বলছি না, নাম বললেই তৃণমূল আবার ঝাঁপিয়ে পড়বে। মহাষষ্ঠীর দিন সবাই সব দেখতে পাবেন। তার পরে পুজোটা আমরা আরও ভাল ভাবে উপভোগ করব।’’