মনোনয়ন জমা দিতে এসে তাপস চট্টোপাধ্যায় ও সব্যসাচী দত্ত। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।
বেলা সওয়া ১টা। বিধাননগরের মহকুমা শাসকের দফতরে তিনতলার ৩০৩ নম্বর ঘরে তখন লাগাতার ক্যামেরার ঝলকানি। এক ফ্রেমে বন্দি দু’জনে— সিপিএম ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে আসা তাপস চট্টোপাধ্যায় এবং নিউ টাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। চার বছর ধরে যাঁরা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলেই পরিচিত। তবু দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে সোমবার দৃশ্যতই ভিন্ন মেরু ছেড়ে একই বিন্দুতে মিলে গেলেন দু’জনে।
বিধাননগর পুর-নিগমের নির্বাচনের জন্য এ দিন মনোনয়ন জমা দেন তৃণমূলের ৪১ জন প্রার্থী। তাপসবাবু ও সব্যসাচীবাবুকে দলগত ভাবে এক করতে রবিবার তাঁদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘দুই নেতাকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নিউ টাউনের ৪১টি আসনেই জিততে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে।’’ জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, নির্বাচনের জন্য দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে বুধবার সল্টলেকের এফডি পার্কে কর্মিসভা করবেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী প্রমুখ নেতারা। সভা হবে রাজারহাট ও নিউ টাউনেও।
২০১১ সালে নিউ টাউনে তৎকালীন সিপিএম প্রার্থী তাপসবাবুকে হারিয়েই বিধায়ক হন সব্যসাচীবাবু। রাজারহাটের রাজনীতিতে দু’জনের‘ দ্বৈরথ’ তখন থেকেই। ২০১২-য় নারায়ণপুরের বাবলাতলায় সিপিএম-তৃণমূলের গোলমাল ঘিরে এলাকাছাড়া হতে হয় তৎকালীন রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপসবাবুকে। পরে তিনি তৃণমূলে এলেও সব্যসাচীবাবুরা তাঁকে মানতে চাইছিলেন না বলেই সূত্রের দাবি। কখনও পার্টি অফিস, কখনও কলেজ ইউনিয়নের দখলদারি ঘিরেও দু’পক্ষের গোলমালের খবর ছিল নেতৃত্বের কাছে।
তাপসবাবুর এলাকায় সব্যসাচীবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শাহনওয়াজ আলি মণ্ডলের (ডাম্পি) সঙ্গেই তাঁর মূলত বেশি গোলমাল হচ্ছিল বলে খবর। তাপসবাবু এ বার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী। ডাম্পি ৪ নম্বরে। দুই ওয়ার্ডই সব্যসাচীবাবুর নিউ টাউন বিধানসভায়। যার কিছু ওয়ার্ডে তাপসবাবুরও পরিচিতি আছে। দুই নেতাকে ঐক্যবদ্ধ না করলে ভোটে প্রভাব পড়তে পারে বলেই মনে করছিল তৃণমূল। তাই রবিবার জ্যোতিপ্রিয়বাবুই উদ্যোগী হয়ে বৈঠক করেন। এ দিন দেখা যায়, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় তাপসবাবুর কিছু ভুল ঠিক করে দিচ্ছেন সব্যসাচীবাবু। তাপসবাবুকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখা যায় ডাম্পিকেও।
তবে কি লড়াই শেষ হল? সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই ছিল না। তাপসদার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আমি নিজে প্রচার করব।’’ তাপসবাবু বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত নয়, নীতিগত লড়াই ছিল। তখন সিপিএম করতাম। এখন তৃণমূলে। সব্যসাচীবাবু তো আমার সহকর্মী।’’
দুই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার দ্বন্দ্ব এক সন্ধ্যার বৈঠকে আদৌ মিটবে কি না, সে প্রশ্ন অবশ্য থাকছেই। কারণ তাপসবাবুর উদ্দেশে ডাম্পির লোকেরা ‘হায় হায়’ বলায় একটু হলেও কেটে যায় ‘ঐক্যে’র সুর। যদিও তাঁদের থামিয়ে দেন ডাম্পিই।