Russia Ukraine War

Russia Ukrain war: ইউক্রেনের বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চাইছি, কলকাতা বইমেলায় বললেন রুশ কন্যা

ইউক্রেনের সরোচিনৎসি শহরে জন্মে নিকোলাই গোগোল এখন খাস মস্কোয় মস্কোভা নদীর ধারে দানিলভ মঠের সমাধিতে শুয়ে আছেন।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২২ ০৭:২৬
Share:

বইমেলায় রাশিয়ার প্যাভিলিয়নে অ্যানা মোরেভা। নিজস্ব চিত্র

ভারতীয় বন্ধুরা কি এই যন্ত্রণা বুঝতে পারছেন? পারা উচিত, বলছিলেন ছোট্টখাট্টো রুশ মেয়েটি। বইমেলার রাশিয়া প্যাভিলিয়নে মস্কোর অন্যতম সাংস্কৃতিক দূত অ্যানা মোরেভা বললেন, “আপনারাও তো ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে ভাঙন দেখেছেন। যুদ্ধ, শত্রুতা, রাজনীতি— কোনও কিছুই রাশিয়া-ইউক্রেনের যৌথ ইতিহাস, সংস্কৃতি ভাগ করতে পারে না।”

Advertisement

বইমেলা থেকে দূরে, গড়িয়ার বাড়িতে বসে ৮৪ বছরের এক প্রবীণ বাঙালি বললেন, “যতই যুদ্ধ হোক, ১২০০ বছর আগের স্লাভ রাজ্য থেকে রুশ অর্থোডক্স গির্জার পত্তনে একাকার রাশিয়া, কিভ বা ইউক্রেন! আমাদের লালন, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, নজরুলের মতো রুশ আর ইউক্রেনিয়ানরা গোগোলকে ভাগ করার কথাও ভাবতে পারে না!” তিনি অরুণ সোম, রুশ সাহিত্যের ভুবন বাংলায় ভাষান্তরের স্বর্ণযুগের শেষ মহারথী। গোগোল থেকে দস্তয়েভস্কি যিনি মূল রুশ থেকে বাংলা তর্জমা করেছেন।

ইউক্রেনের সরোচিনৎসি শহরে জন্মে নিকোলাই গোগোল এখন খাস মস্কোয় মস্কোভা নদীর ধারে দানিলভ মঠের সমাধিতে শুয়ে আছেন। রুশ ভাষায় লেখা তাঁর গল্প, উপন্যাসে শুধুই সেন্ট পিটার্সবার্গের
নগর-জীবনের নিষ্ঠুরতা নয়, ইউক্রেনের গ্রামে শীত-সন্ধ্যার গল্প বলার আসর, পোলিশ ভূস্বামীদের প্রতিরোধের কাহিনিও একাকার। “যুদ্ধ এই গোগোলকে ভাগ করেনি,” রুশ প্যাভিলিয়নে গোগোল ও গোগোল বিষয়ক বই নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন অ্যানাও। মস্কোর স্টেট লিঙ্গুইস্টিক্স ইউনিভার্সিটির মিডিয়া কমিউনিকেশনসের শিক্ষিকা-সম্পাদক অ্যানার ছাত্রছাত্রী, বন্ধুরা ইউক্রেন জুড়ে ছড়িয়ে। তাঁদের কথা বলতে গিয়ে চোখ চিকচিক করছে রুশ মেয়ের। অ্যানা বলছেন, ‘‘আমার ভিতরটা ইউক্রেনের সব বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাইতেই হাঁকপাঁক করছে! যদিও আমি অসহায়, যা ঘটছে, ঘটে চলেছে, তাতে তো আমার হাত ছিল না।”

Advertisement

কেন এই যুদ্ধ? রাজনীতি? ষড়যন্ত্র? আত্মরক্ষা? শব্দের ঘোরপ্যাঁচে ঢুকতে চান না তিনি। তবে যুদ্ধ খুব খারাপ, একেবারে চরম পদক্ষেপ বলতেও তাঁর দ্বিধা নেই। ইউক্রেনকে রুশ-বিরোধী শক্তি ব্যবহার করছে বলে অ্যানা মনে করেন। আবার যুদ্ধ মানেই নিরীহদের প্রাণহানি, বোমা বিস্ফোরণ, ক্ষয় বলতে বলতে যেন কুঁকড়ে যাচ্ছেন তিনি।

এই যুদ্ধের জন্য অবশ্য এক কথায় কারও উপরেই একতরফা দোষ চাপাতে চান না অ্যানা। কিন্তু রাশিয়ায় যুদ্ধ-বিরোধী প্রতিবাদের নৈতিক অধিকারটুকু অস্বীকার করছেন না। রাশিয়ার সাংবাদিক ইউনিয়নের মস্কো অঞ্চলের এক জন সিনিয়র সদস্য অ্যানার কথায়, “যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অঙ্গ।”

বইমেলার মাঠে অরুণবাবুর অনুবাদে গোগোল গল্পসংগ্রহ ছাড়াও বাংলায় পুরনো রুশ বইয়ের দোকানে সোভিয়েত জমানায় প্রকাশিত বাংলা ‘ইউক্রেনের রূপকথা’রও খোঁজ চলছে। রুশ উপকথার কোনটা রাশিয়ার, কোনটা ইউক্রেনের, বহু বছর রুশ দেশে কাটিয়েও তা আজ আলাদা করতে পারেন না অরুণবাবু বা তাঁর স্ত্রী, রুশ নারী লুদমিলা। মস্কো থেকে দিল্লির উড়ান নিয়ে কিছু বিধিনিষেধে বইমেলার অতিথি দুই রুশ শিশু সাহিত্যিকের আসা এ বার অনিশ্চিত। তবে সম্ভবত দুবাই হয়ে আসছেন তুলসীদাসের অনুবাদক, হিন্দি-অওয়ধি কবিতা থেকে রামলীলা বিশারদ ম্যাক্সিম দেমচেঙ্কো। অ্যানা নিজেও রুশ সরকারের প্রকল্পে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরোগ্য নিকেতন’ রুশ ভাষায় অনুবাদের কাজে (অনুবাদক দেবস্মিতা মৌলিক) এক জন উপদেষ্টা।

মস্কোর উপকণ্ঠে করোলিয়ভ শহরের বাসিন্দা অ্যানা বললেন, ‘‘গোগোল ছাড়াও আমার শহর যাঁর নামে, সেই সের্গেই করোলিয়ভও ইউক্রেনের। তিনিই মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের ‘গুরু’! মৃত্যুর পরে করোলিয়ভও মস্কোয় ক্রেমলিনে শায়িত।’’ যুদ্ধের ছায়াতেও ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বোধে বইমেলার রুশ-ইউক্রেন বন্ধুতা অটুট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement