বিপদ-সরণি: বেহাল রুবি হাসপাতালের সামনের রাস্তা।
পথের ক্ষত সারল তো না-ই, বরং বাড়ল। দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরি এবং হোর্ডিং লাগানোর জন্য খোঁড়া অসংখ্য গর্তের জেরে শহরের অবস্থা এখন এমনই। কোথাও সেই গর্ত এমন ভাবে হাঁ হয়ে রয়েছে যে, অসাবধানে পা পড়লে বিপদ ঘটতে বাধ্য। কোথাও আবার এমন গর্তে বৃষ্টির জল জমে থাকায় গাড়িচালকেরা বুঝতেই পারছেন না, সামনে কী রয়েছে। কিন্তু বিপদ জেনেও গর্ত কে সারাবে, তার উত্তর নেই কারও কাছে। পুরসভা দায় চাপাচ্ছে পুজো কমিটিগুলির উপরে। তাদের দাবি, ‘পুজোর ছাড়’ হিসাবে কোনও পুজো কমিটির থেকেই রাস্তা খোঁড়া বাবদ ‘রেস্টোরেশন চার্জ’ নেওয়া হয় না। ফলে গর্ত বোজানোর দায়িত্ব পুজো কমিটিগুলিরই। পুজো কমিটিগুলি আবার বলছে, অত পিচ তারা পাবে কোথায়? ফলে পুরসভাকেই গর্ত বোজাতে হবে। সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশের আবার প্রশ্ন, পুজোর ছাড়ের নামে পুরসভা বছরের পর বছর রেস্টোরেশন চার্জ নেবে না-ই বা কেন? তাঁদের দাবি, টাকা না নেওয়ায় এক দিকে যেমন পুরসভার আয় কমছে, তেমনই টাকার ব্যাপার না থাকায় জনসাধারণের বিপদ বুঝেও কেউ মাথা ঘামাচ্ছেন না।
এ বার পুজো শুরুর আগেই পুরসভা এবং ট্র্যাফিক পুলিশের অন্যতম মাথাব্যথা ছিল শহরের ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট। পুজোর মুখে তড়িঘড়ি কিছু জায়গায় পিচের তাপ্পি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু নাগাড়ে বৃষ্টিতে প্রায় সর্বত্র সেই তাপ্পি ধুয়ে পথের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে বিপদ বাড়িয়েছে পুজোর খোঁড়াখুঁড়ির জন্য তৈরি হওয়া গর্ত। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা রাসবিহারী অ্যাভিনিউ এবং অরবিন্দ সরণির। বাদ নেই লেক রোড বা কলেজ স্ট্রিটও। শরৎ বসু রোড বা রবীন্দ্র সরণির আবার এমনই অবস্থা যে, ফুটপাত থেকে নামতে গেলেই গর্তে পা পড়ছে। কোথাও আবার মণ্ডপের জন্য খোঁড়া গর্ত ভরে উঠেছে প্লাস্টিক বা খাবারের ঠোঙায়। দেশপ্রিয় পার্ক বা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের মতো কিছু জায়গায় আবার মাঠে পাতা পাটাতন সরাতেই জেগে উঠেছে একের পর এক গর্ত। মুদিয়ালির এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘এই অত্যাচার প্রতি বছরই চলে। প্রতিবাদ করার উপায় নেই।’’ উল্টোডাঙা থেকে অটোয় ওঠা এক যাত্রীর আবার মন্তব্য, ‘‘দিনকয়েক আগে কোমরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। পুজোর পরে এই সময়ে অটোয় উঠতে ভয় লাগে। গর্তে অটোর চাকা পড়লে জীবন বেরিয়ে গেল মনে হয়।’’
বছরের পর বছর এমন পরিস্থিতি চলতে থাকে কী করে? কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা রাস্তা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রতন দে বলেন, ‘‘বার বার বলা সত্ত্বেও এর সমাধানসূত্র বেরোয় না। যে হেতু ‘পুজোর ছাড়’ হিসাবে রেস্টোরেশন চার্জ নিই না, ফলে মানবিকতার দিক থেকে পুজো কমিটিগুলিরই উচিত গর্ত বুজিয়ে দেওয়া। এ বারও দ্রুত গর্ত বোজানোর জন্য চাপ দেওয়া হবে।’’
মহাত্মা গাঁধী রোডের কাছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বোজানো হয়নি পুজোর সময়ের বাঁশের গর্ত।
কিন্তু লেক টাউনের একটি নামী পুজোর কর্তা বললেন, ‘‘এর চেয়ে বরং পুজো কমিটির থেকে রেস্টোরেশন চার্জ নিক পুরসভা। টাকা নেওয়া হয় না বলে এমন কাজ করে দিতে বলা হচ্ছে, যা আমাদের সাধ্যের বাইরে।’’ চাপে পড়ে আগামী বছর থেকে রেস্টোরেশন চার্জ নেওয়া হবে কি না, সেই ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে পুরসভা। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর আর এক সদস্য তথা ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজোকর্তা দেবাশিস কুমার যদিও বলে দিলেন, ‘‘পুজো কমিটিগুলি এত পিচ কোথায় পাবে, রোলারই বা কোথায় পাবে? পরের বছর যা-ই হোক, এ বার অন্তত গর্ত বোজানোর দায়িত্ব পুরসভাকেই নিতে হবে।’’