এবড়োখেবড়ো: বৃষ্টির পরে এমনই হাল হয়েছে রাস্তার। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি:বিশ্বনাথ বণিক
সবেমাত্র কয়েক মাস আগে রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। তারই মধ্যে গত সপ্তাহে টানা দু’দিনের বৃষ্টির পরে ফের প্রকট হয়ে গিয়েছে শহরের বিভিন্ন রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা। কোথাও বিরাট বিরাট হাঁ-করা গর্ত, কোনও রাস্তা ভেদ করে বেরিয়ে পড়েছে পাথরগুঁড়ো। উত্তরের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, রাজাবাজার মোড়, দমদম রোড, ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া রাস্তা থেকে শুরু করে ই এম বাইপাস বা দক্ষিণের বেহালা অথবা এন এস সি বসু রোড— সর্বত্রই এক ছবি।
বৃষ্টিতে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের গিরিশ পার্ক মোড়ে তৈরি হয়েছে বিশাল গর্ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে একাধিক মোটরবাইক ওই গর্তে পড়ে উল্টে গিয়েছে। দ্রুত রাস্তা মেরামতি না করলে বড় দুর্ঘটনা অনিবার্য।’’ রাজাবাজার মোড়ে আবার দেখা গেল, গর্ত বোজাতে ঢালা হয়েছে ভাঙা ইটের টুকরো। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘‘বার বার এ ভাবে তাপ্পি মারায় বিপদ আরও বাড়ছে। এই ইটের টুকরো তো কিছু দিন পরেই উঠে যাবে।’’
শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা থেকে মেয়ো রোড যাওয়ার পথে দেখা গেল, ধর্মতলা বাস টার্মিনাসের পাশের রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগমের বাস টার্মিনাসের সামনের রাস্তা ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে পাথর। পুলিশ ও পুরসভা সূত্রের খবর, একই রকম অবস্থা দমদম রোড, টালা ও পাইকপাড়ার বেশ কিছু রাস্তার। ভেঙেচুরে গিয়েছে টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন থেকে গড়িয়াগামী এন এস সি বসু রোডের একাংশ এবং বেহালা ও হরিদেবপুরের একাধিক রাস্তাও।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, রাস্তা সারাইয়ের পরে যদি দু’দিনের বৃষ্টিতে তার পিচ উঠে যায়, তা হলে সেই দায় কার? পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের, না দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার? পুরসভার রাস্তা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রতন দে-র দাবি, ‘‘এতে ঠিকাদারদের খামতি নেই। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে প্রকাশ্যে পিচ গলানো বারণ। ফলে, ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট দেওয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র বিটুমিন দেওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন রাস্তা কয়েক ঘণ্টা জলে ডুবে থাকলেই ভেঙেচুরে যাচ্ছে। ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের কারখানা তৈরির জন্য আমরা শহরের বাইরে জমি চিহ্নিত করেছি।’’ যদিও পুরসভার রাস্তা দফতরের অন্দরে কেউ কেউ এই প্রশ্নও তুলছেন, প্রকাশ্যে পিচ গলিয়ে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট তৈরি না হয় বছর দুই যাবৎ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তার আগেও তো টানা বৃষ্টিতে বেহাল হয়ে পড়ত রাস্তা। তখন দায় কার ছিল?
পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পানীয় জলের পাইপলাইন সারাই, কেব্লের কাজ হয়ে চলেছে সারা বছর। সেই সব কাজে রাস্তা খোঁড়ায় রাস্তার দ্রুত ক্ষতি হচ্ছে। তবে কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডিজি (নগর পরিকল্পনা) দীপঙ্কর সিংহের অভিযোগ, ‘‘ঠিক মতো উপাদান দিয়ে রাস্তা মসৃণ করে তার উপরে রোলার চালাতে হবে। সেই দায়িত্ব ঠিকাদার সংস্থার। পাশাপাশি, রাস্তা সংস্কারের কাজ চলাকালীন পুর ইঞ্জিনিয়ারদের তদারকিও গুরুত্বপূর্ণ। যেটা ঠিক মতো হয় না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সারাইয়ের সময়ে রাস্তার উপাদানগুলি ঠিক মতো জমাট বাঁধতে পারছে না। এর ফলে পিচের সূক্ষ্ম ফাঁক গলে বৃষ্টির জল ঢুকে যাচ্ছে। যার জন্য এক বার মেরামতির পরে কিছু দিন যেতে না যেতেই ফের ভেঙে যাচ্ছে রাস্তা।’’
পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম প্রতি বারের মতোই এ বারও বলেছেন, ‘‘বৃষ্টি থামলেই সমস্ত ভাঙা রাস্তা সারিয়ে দেবে পুরসভা।’’ কিন্তু সেই সারাইয়ের স্থায়িত্ব কত দিন? স্পষ্ট উত্তর নেই কারও কাছেই।