দুর্ঘটনার পরে সেই গাড়ি। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।
আচমকা বিকট একটা শব্দ। পরক্ষণেই বড় একটি গাড়ি প্রায় উড়ে গিয়ে আছড়ে পড়ল রাস্তার অন্য লেনে। রাস্তার এক ধারে ছিটকে পড়লেন এক মহিলাও। সোমবার সাতসকালে চোখের সামনে এ দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন বালির ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে থাকা যানবাহনের চালক ও এলাকাবাসীরা।
পুলিশ জানায়, সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ সরকারি বাসের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষের এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একই পরিবারের দুই ভাই এবং পথচারী এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের নাম বসন্তলাল শেঠ (৫৪), কমললাল শেঠ (৪০) ও অর্চনা জানা (৫০)। বাস ও গাড়ির যাত্রী মিলিয়ে জখম হয়েছেন মোট ১৫ জন। পাঁচ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁদের মধ্যে চার জন বিমললাল, নির্মললাল, রামলাল ও শ্যামলাল হলেন বসন্তলাল ও কমললালের ভাই। অন্য জন তাঁদের গাড়ির চালক মনিরুল শেখ। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাসটিকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, জাতীয় সড়ক ধরে একটি বড় গাড়িতে ডানকুনির দিক থেকে কলকাতার দিকে আসছিলেন সাত জন। গাড়িতেই ছিলেন বসন্তলালবাবুরা সকলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, বালির বামুনডাঙা জিরো পয়েন্টের কাছে রাস্তা পার হতে আচমকা গাড়ির সামনে চলে আসেন ঠাকুরাণীচক কালীতলার বাসিন্দা অর্চনাদেবী। তাঁকে বাঁচাতে তীব্র গতিতে ব্রেক কষে গাড়িটি। এ ভাবে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ায় পিছনে থাকা বর্ধমান-বিধাননগর রুটের একটি সরকারি বাস সজোরে ধাক্কা মারে গাড়িটিতে। তাতে গাড়িটি অর্চনাদেবীকে ধাক্কা মেরে প্রায় ৫০ ফুট দূরে পাশের রাস্তায় গিয়ে পড়ে। বিকট শব্দে ছুটে আসেন স্থানীয় লোক ও অন্য যানবাহন চালকেরা। পৌঁছয় বালি ট্রাফিক ও নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বসন্তলালবাবুদের গাড়িটির পিছনের অংশ পুরো দুমড়ে-মুচড়ে যায়। বাসটিরও সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ আহতদের নিবেদিতা সেতু টোল প্লাজার অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বসন্তলাল ও কমললালকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। অচর্নাদেবীকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই মারা যান তিনি। বাসে থাকা যাত্রীদের কারও মাথা, কারও নাক-মুখ ফেটেছে। তাঁদের এক জন, পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী সাইমন দত্ত বলেন, ‘‘বাসের সামনে একটা বড় গাড়ি ছিল। নিবেদিতা সেতুর মুখে আচমকা গাড়িটা দাঁড়িয়ে যেতেই বাস তাতে সজোরে ধাক্কা মারে। পিছনের সিটের যাত্রীরা সব সামনে ছিটকে পড়ি।’’ ওই যুবকের নাকের হাড় ভেঙে গিয়েছে।
এ দিন উত্তরপাড়া হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দমদমের ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র রোডের বাসিন্দা পেশায় বালি-সিমেন্টের ব্যবসায়ী বসন্তলালবাবুদের পরিজনেদের ভিড়। তাঁরাই জানান, জমি-সমস্যা মেটাতে গত শুক্রবার বসন্তলালবাবুরা সাত ভাই মিলে উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে দেশের বাড়িতে গিয়েছিলেন। রবিবার রাতে সেখান থেকে রওনা দেন দমদমের উদ্দেশে। বসন্তবাবুর এক জামাই বিনোদ বর্মা জানান, সাত ভাই একসঙ্গে গ্রামে গেলেও শেষ মুহূর্তে নিমন্ত্রণ এসে যাওয়ায় ছোট ভাই রমেশলাল উত্তরপ্রদেশেই থেকে যান।