প্রতীকী ছবি
করোনায় যাঁরা মারা যাচ্ছেন, ধাপার মাঠে দু’টি চুল্লিতে তাঁদের দেহ সৎকার হচ্ছে। সম্প্রতি বিকল হয়ে গিয়েছিল সেই দু’টি চুল্লিই। সারাইয়ের পরে গত রবিবার সেগুলি আবার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, চুল্লি দু’টি ফের বিগড়োতে পারে।
এমন আশঙ্কার কারণ কী? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, করোনায় কারও মৃত্যু হলে দেহটি প্লাস্টিকে মুড়তে হবে। সেই মরদেহ ছোঁয়া থেকেও যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত দু’মাস ধরে কলকাতায় করোনায় মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেহ প্লাস্টিকে মুড়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ধাপায়। ওই অবস্থাতেই দেহ ঢোকানো হচ্ছে চুল্লিতে।
এর ফলে মরদেহের সঙ্গে পুড়ছে প্লাস্টিকও। অভিযোগ, পোড়া সেই প্লাস্টিক আটকে দিচ্ছে ধোঁয়া নিষ্ক্রমণের পাইপ। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, মৃতদেহের সঙ্গে জড়ানো ওই প্লাস্টিক পুড়ে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে? রাজ্য পরিবেশ দফতরের আধিকারিকেরা জানান, সাধারণ ভাবে প্লাস্টিক পোড়াতে হলে অধিক তাপমাত্রার চুল্লিতে দূষণ না-ছড়িয়ে পোড়ানোই শ্রেয়। রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘করোনায় মৃতদের দেহ প্লাস্টিকে মুড়েই পোড়ানো হচ্ছে। ফলে এই
মুহূর্তে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা সম্ভব হয়নি। অন্যান্য ক্ষেত্রে প্লাস্টিক যে ভাবে আলাদা করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।’’
দ্বিতীয় সমস্যার কারণ পেসমেকার। করোনায় মৃত্যু হলে অনেক দেহই পেসমেকার-সহ আসছে। শ্মশানে তা খোলা সম্ভব নয় বলে চুল্লিতে পেসমেকার-সহই ঢুকছে দেহ। জানা গিয়েছে, পেসমেকার বসানো অবস্থায় দেহ চুল্লিতে ঢোকালে বিস্ফোরণ হতে পারে। আশঙ্কা, ধাপাতেও বিস্ফোরণের ফলে বিগড়ে যাচ্ছে চুল্লি।
যদিও কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে চুল্লি রক্ষণাবেক্ষণ হওয়ার জন্য সেগুলির অবস্থা অনেক ভাল। চুল্লিতে কোথাও কিছু আটকে থাকলে বার করে দেওয়া হচ্ছে। তবে পেসমেকার-সহ কাউকে দাহ করা হয়েছে বলে তাঁদের জানা নেই।
প্রাথমিক ভাবে ভাবা হয়েছিল, আমপানের দাপটে চুল্লি দু’টি খারাপ হয়েছে। কিন্তু পুলিশকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, তার আগে থেকেই চুল্লি দু’টিতে সমস্যা ছিল।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ধাপার যে দু’টি চুল্লিতে করোনায় মৃতদের দেহ সৎকার হচ্ছে, সেগুলিতে সমস্যা হয়েছিল ঠিকই। তবে আপাতত তা মেরামত করা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণেও জোর দেওয়া হচ্ছে। তাই হঠাৎ করে আবার চুল্লি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা নেই।’’