এক বছর প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলেন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ। সেখান থেকে বেরিয়েই চন্দননগর হয়ে পুদুচেরি পাড়ি দেন ঋষি অরবিন্দ। এ বার ওই ‘সিক্স ডিগ্রি সেল’-টি সংরক্ষণ করার কাজ শুরু করল কারা দফতর। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৪ এপ্রিল সংরক্ষিত ওই সেল খুলে দেওয়া হবে বন্দিদের জন্য।
১৯০৮ সালের ২ মে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি হয়ে এসেছিলেন অরবিন্দ। ৭ ফুট বাই ১২ ফুট ছোট ওই ‘সিক্স ডিগ্রি সেল’-এ জিনিসপত্র বলতে ছিল দু’টি কম্বল এবং থালা-বাটি-গ্লাস। ওই সেলে এর অতিরিক্ত কোনও জিনিস দেওয়ার অনুমতিই ছিল না তদানীন্তন ইংরেজ শাসকের। এমনকী, ওই সেলে ভাল একটি শৌচাগারও ছিল না। তার মধ্যেই এক বছর কাটিয়েছেন অরবিন্দ। আর সেখানে থেকেই তাঁর দিব্যজ্ঞান লাভ হয়েছিল বলে দাবি করেন তাঁর শিষ্যেরা। এত দিন পর্যন্ত ওই সেলে অরবিন্দের শুধু একটি ছবি ছিল। সেলটি সাজানো হয়েছিল মোজেইকে। সেটি পরিষ্কার করতেন বন্দিরা। এ বার সেলটি সেই সময়কার অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে পূর্ত দফতর। সেলের সামনেই একটি পিপুল গাছের নীচে মাঝেমধ্যে বসে থাকতেন অরবিন্দ। সেখানে বেদি তৈরি করে কৃষ্ণমূর্তি বসানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারা কর্তারা।
কারা দফতরের এক কর্তা জানান, অরবিন্দের এই সেলটি সংরক্ষণের পরে সেখানে একটি ছোটখাটো সংগ্রহালয়ও তৈরি করা হবে। কী কী থাকবে সেখানে? ওই কর্তা বলেন, ‘‘অরবিন্দের জীবনী, তাঁর ব্যবহৃত কিছু জিনিসের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং বিচারকের রায়ের প্রতিলিপি রাখা হবে সেলটিতে। সঙ্গে থাকছে একটি অডিও-মাধ্যম। বন্দিরা চাইলে তা শুনতে পারবেন।’’ ওই কর্তা আরও জানান, সেলটি সংরক্ষণের কাজে যুক্ত করা হয়েছে জেলের সংশোধন প্রক্রিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়কে। মূলত তাঁরই উদ্যোগে সেলে অরবিন্দের জীবনী শোনার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
অলকানন্দা রায় জানান, অরবিন্দের জীবনী নিয়ে নানা বইয়ে বলা হয়েছে, ওই সেলের একটু দূরেই একটি পিপুল গাছ ছিল। তার নীচে বসেই কৃষ্ণের দেখা পেয়েছিলেন ঋষি অরবিন্দ। তার পর থেকে জেলটিকে তিনি একটি তপোবন হিসেবে দেখতেন। আর সহবন্দিদের মধ্যেই খুঁজে পেতেন কৃষ্ণকে। অলকানন্দা বলেন, ‘‘পিপুল গাছটিই ওই সময়ের গল্প বলছে, এই ঢঙে অডিও উপস্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছে। তাতে যেমন থাকছে উত্তরপাড়ায় ঋষি অরবিন্দের বক্তৃতা, শ্রীমার অরগ্যান মিউজিকের নির্বাচিত অংশ, তেমনই থাকছে গান এবং অরবিন্দের জীবনী।’’
প্রেসিডেন্সি জেলে এক বছর থাকার পরে মুক্তি পান অরবিন্দ। সেখান থেকে তিনি চলে যান চন্দননগরে। তার পরে পুদুচেরি। কারা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ৪ এপ্রিল চন্দননগর থেকে পুদুচেরি গিয়েছিলেন অরবিন্দ। সে কারণে ওই দিনেই সেলটি সংরক্ষণের কাজ শেষ করে তা উদ্বোধন করতে চান তাঁরা। তার পরে বিকেল ৪টে থেকে আধ ঘণ্টার জন্য ওই সেলের সামনেই অডিও-অংশটি বন্দিদের শুনতে দেওয়া হবে। কারা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘অরবিন্দের জীবনী এবং তাঁর কথা শুনে যদি তাঁর মতোই কোনও বন্দির উপলব্ধি হয়, তবে তা খারাপ কী!’’