নেড়াপোড়ার ধোঁয়া থেকে ছড়ায় দূষণ। ফাইল চিত্র
বাজি পোড়ানোর কারণে কালীপুজো এবং দীপাবলিতে সল্টলেক থেকে শব্দ ও পরিবেশ দূষণের ভূরি ভূরি অভিযোগ পৌঁছয় প্রশাসনের কাছে। দোলের আগে সেই শহরের বাসিন্দাদের একাংশই পরিবেশ সচেতনতার পরিচয় দিলেন। ব্লকের মাঠে একটি সংগঠনের তরফে প্রতি বছর দোলের আগে ‘হোলিকা দহন’ উৎসব পালন করা হয়। সেই অনুষ্ঠান বন্ধের আবেদন জানিয়ে সল্টলেকের একটি ব্লকের বাসিন্দারা একযোগে চিঠি দিলেন বিধাননগর পুরসভা ও পরিবেশ দফতরে।
দোলের আগে বিভিন্ন জায়গায় হোলিকা দহন কিংবা নেড়াপোড়া হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই পাট, খড়, টায়ার, কাগজ, গাছের ডালপালা, বাঁশের টুকরো-সহ নানা ধরনের বর্জ্য পোড়ানো হয়। পরিবেশকর্মীরা জানান, এক দিকে আগুনের শিখাও অনেক উঁচুতে ওঠে। তার সঙ্গে অত সব জিনিসপত্র পোড়ার জেরে পরিবেশ দূষণও হয়। জাতীয় পরিবেশ আদালত ইতিমধ্যেই যে কোনও ধরনের বর্জ্য পোড়ানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু অভিযোগ, উৎসবের আগে সেই নিষেধাজ্ঞা মনে রাখা হয় না অনেক জায়গাতেই। তার মধ্যে সল্টলেক কিংবা বিধাননগর পুর এলাকাও রয়েছে। তারই মধ্যে সল্টলেকের একটি ব্লক পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
বিধাননগর পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিসি ব্লক থেকে হোলিকা দহন অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বাসিন্দারা। অভিযোগ, সেখানকার কমিউনিটি হলের সামনে কয়েক ঘণ্টা ধরে ওই দহন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একটি সংগঠন। সেটির বিরুদ্ধেই এ বার সরব বিসি ব্লকের বাসিন্দারা। স্থানীয় কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কাছে সংগঠনের তরফে অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সায় দেননি অনিন্দ্য। তিনি জানান, ওই ধরনের অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে তাঁর পক্ষে ‘নো অবজেকশন’ দেওয়া সম্ভব নয়।
বাসিন্দাদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, ‘হোলি’ উৎসবের আগে ওই ‘হোলিকা দহন’ অনুষ্ঠানে কয়েক ঘণ্টা ধরে খোলা জায়গায় রকমারি সামগ্রী পোড়ানো হয়। আশপাশে অনেকেরই বাড়ি রয়েছে। সেই সব বাড়িতে প্রবীণ নাগরিকেরাও রয়েছেন। ধোঁয়া ঘরে ঢুকে যাওয়ায় তাঁদের সমস্যা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘বিধাননগরের কোথাও ওই ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি যেন না দেওয়া হয়।’’
পুরসভা সূত্রে খবর, জানুয়ারির শেষের দিকে সল্টলেকের ওই সংগঠনের তরফে অনুষ্ঠানের জন্য আবেদন করা হয়। তাতে বলা হয়, ৯ মার্চ বিসি ব্লক কমিউনিটি হলের কাছে ৫০০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলবে ওই অনুষ্ঠান।
পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, বাসিন্দাদের গণ আবেদনের ভিত্তিতে বিষয়টির উপরে নজর রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে এবং বর্জ্য পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞার কথাও জানানো হয়েছে। বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, পুরসভার তরফে কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আবেদনকারী সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় আগরওয়াল জানান, তাঁরা অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন প্রশাসনকে। তবে তা নিয়ে কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। ফলে তাঁরা এখনই এ নিয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
আবাসিকদের সংগঠন বিধাননগর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের এই আবেদন ইতিবাচক। মানুষ সচেতন হচ্ছেন। উৎসবের কারণে যেন পরিবেশের ক্ষতি না হয়।’’