বই থেকে দলিল, রয়ে গিয়েছে সবই

এ দিন সকালে দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা অর্চনা দাস জানান, রবিবার রাতে বাড়ি ছেড়ে বেরোনোর জন্য তাঁরা সময় পেয়েছিলেন মাত্র পাঁচ মিনিট। তার মধ্যেই যা যা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, সব গুছিয়ে নিতে বলা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩৯
Share:

বিক্ষুব্ধ: বৌবাজারে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট অবরোধ করে বিক্ষোভ এলাকার বাসিন্দাদের। সোমবার ঘণ্টা দেড়েক চলে অবরোধ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কেউ বাড়িতে ফেলে গিয়েছেন বইপত্র। কেউ বা পেনশন ও বাড়ির দলিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি। কারও বা রয়ে গিয়েছে জরুরি ওষুধ। সোমবার সকালে সেকরাপাড়া লেন ও দুর্গা পিতুরি লেনের বেশ কয়েক জন বাসিন্দা পাড়ায় জড়ো হয়েছিলেন নিজেদের বাড়ি থেকে সেই সব জিনিস নিয়ে যাবেন বলে। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে বাড়িতে তো দূরের কথা, তাঁদের কাউকে গলিতে ঢোকারও অনুমতি দেয়নি পুলিশ।

Advertisement

এ দিন সকালে দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা অর্চনা দাস জানান, রবিবার রাতে বাড়ি ছেড়ে বেরোনোর জন্য তাঁরা সময় পেয়েছিলেন মাত্র পাঁচ মিনিট। তার মধ্যেই যা যা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, সব গুছিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ওইটুকু সময়ে কি সব কিছু নেওয়া যায়? অর্চনার কথায়, ‘‘প্রায় এক কাপড়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে হোটেলে যেতে হয়েছিল। সময়ই পাইনি কিছু নেওয়ার। সামনেই মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা। ওর কোনও বই নেওয়া হয়নি। মেয়ের বইগুলো অন্তত নেওয়ার জন্য এক বার যদি পুলিশ ঘরে ঢুকতে দিত! কিন্তু দিল না।’’

একই অবস্থা দশম শ্রেণির পড়ুয়া অস্মিতা সেনের। সোমবারই বাংলার প্রোজেক্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার দু’দিন আগেই শনিবার সন্ধ্যায় কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রায় খালি হাতে সেকরাপাড়া লেনের বাড়ি থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে আসতে হয় তাকে। সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। বইপত্র হারালেও সেগুলি কিনে নিতে পারবে সে।

Advertisement

কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে পরীক্ষার জন্য যে নোট সে জমিয়েছিল, সেগুলি আর পাওয়া যাবে কি? কী করে পরীক্ষায় বসবে, আপাতত সেই চিন্তায় হোটেলে বসে অনবরত কেঁদে চলেছে অস্মিতা।

সেকরাপাড়া লেনের সামনে ঘোরাঘুরি করছিলেন প্রথম বর্ষের কলেজছাত্রী প্রিয়াঙ্কা দত্ত। তাঁকেও গলির মুখে আটকে দেয় পুলিশ। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘রবিবার সকাল ন’টায় আমাদের বলা হল, পাঁচ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে ঘর ছাড়তে হবে। কারণ, যে কোনও মুহূর্তে ঘর ভেঙে পড়তে পারে। আমরা আতঙ্কে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। একটিও বই নিতে পারিনি। পুজোর পরেই সিমেস্টারের পরীক্ষা রয়েছে। হোটেলের ঘরে বসে যে পড়াশোনা করব, সেই উপায়ও নেই। কবে ঘরে ঢুকতে পারব, জানি না।’’

সঞ্জীব বড়াল নামে এলাকার আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে সত্তর বছরের অসুস্থ বৃদ্ধ রয়েছেন। তাঁকে নানা রকম ওষুধ খেতে হয়। সেই ওষুধও নিয়ে বেরোনোর সময় পাইনি। হোটেলের ছোট, বদ্ধ ঘরে উনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’’

সেকরা পাড়া লেন ও দুর্গা পিতুরি লেনের কয়েক জন বাসিন্দার দাবি, নিরাপত্তার কারণে গত বুধবারই তাঁদের বাড়ি থেকে হোটেলে চলে যেতে বলা হয়। সেই মতো তাঁরা সে দিনই হোটেলে চলে যান। কিন্তু শনিবার সকালে বলা হয়, আর কোনও অসুবিধা নেই। হোটেল থেকে বাড়ি ফিরে আসতে পারেন তাঁরা। রাজেশ সাউ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, শনিবার রাতেই ফের বাড়ি কাঁপতে শুরু করে। দেওয়াল ধসে পড়ে কয়েকটি বাড়িতে। তৈরি হয় ফাটল। তখন ফের দ্রুত বাড়ি ছাড়তে বলা হয়। রাজেশবাবুর প্রশ্ন, তা হলে শনিবার তাঁদের হোটেল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হল কেন? শনিবার তো সারা দিন ঘরেই ছিলেন তাঁরা। তখন হাতে সময়ও ছিল অনেকটা। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েই তাঁরা ফিরে যেতে পারতেন হোটেলে। রাজেশবাবু বলেন, ‘‘বাড়ি ফেরার পরেই যে ফের ঘর ছাড়তে হবে, তা ভাবতে পারিনি। পুলিশ ও মেট্রো কর্তৃপক্ষ যখন আচমকা ফের পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার কথা বললেন, তখন আর প্রয়োজনীয় কিছু নেওয়ার সময় পাইনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement