বরাহনগর নেতাজি কলোনি লো-ল্যান্ডের স্বর্ণালঙ্কারে সজ্জিত প্রতিমা।ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
বনেদি বাড়ির কৌলিন্য কিংবা থিম পুজোর জাঁক কোনওটাই নেই। কিন্তু আয়োজনের নৈপুণ্যে শহুরে আবাসনের পুজো নিয়ে মেতে থাকার লোকের কমতিও নেই। পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েন আট থেকে আশি।
বাইপাসের ধারে কালিকাপুরের কাছে রয়েছে রুচিরা রেসিডেন্সি। এক দশকের বেশি পুজোর আয়োজন করছেন আবাসিকেরা। এ বার দ্বাদশ বর্ষ। গত বছর যামিনী রায়ের ছবিতে পল্লি তুলে ধরার পরে এ বারের বিষয়, শান্তি। হিংসা এবং হানাহানির মধ্যে সহনশীলতা এবং বহুত্ববাদের প্রতীক হিসেবে গৌতম বুদ্ধের ভাবধারাকে তুলে ধরতে চান এখানকার আবাসিকেরা। প্যাগোডার আদলে মণ্ডপে থাকবে চৈনিক লন্ঠন। পঞ্চমী থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দু’বেলা খাওয়া। উদ্যোক্তা কৌশিক মিত্র বলেন, “পুজো এখানে বয়স ও ভাষার বেড়া ভেঙে কাছে টানে।”
কিছুটা দূরেই বাইপাসের অজয়নগর মোড়ের কাছে উৎসব এবং উদিতা আবাসনের পুজো। বয়সের বিচারে উৎসব আবাসনের পুজো পুরনো। এ বার ২০তম বর্ষ। সাবেক প্রতিমা এবং মণ্ডপসজ্জা। পুজোর উদ্বোধনে বড় ভূমিকা নেন প্রবীণ আবাসিকেরা। তাঁদের জ্বালানো অসংখ্য প্রদীপেই সূচনা হয় শারদৎসবের। উদিতা আবাসনের পুজোর এ বার ১৮ বছর। সাবেক মণ্ডপে একচালার প্রতিমা পুজো হয়। তবে পুজো ঘিরে এখানেও হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খাওয়া।
বাইপাসের উপরেই সদ্য গড়ে উঠেছে অভিদীপ্তার এলআইজি এবং এমআইজি আবাসন। বয়স মাত্র দুই হলেও ভিন্ন ভাষাভাষির আবাসিকদের এক সুতোয় গেঁথেছে শারদোৎসব। পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সুকুমার রায়ের নাটক, গুজরাটি লোকনৃত্য সবই থাকছে। থাকছে পুজোর দিনে খাওয়ার আয়োজন।
পঞ্চসায়রের কাছাকাছি রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সমবায় কর্মী আবাসন। এই পুজো এ বার ২৮তম বর্ষে। সুকুমার রায়ের নামাঙ্কিত উদ্যানে কয়েকশো পরিবারের উদ্যোগে প্রায় তিন দশক ধরে হচ্ছে পুজো। নিউ গড়িয়া সমবায় আবাসনের পুজোর এ বার ৩১তম বর্ষে। এ বারের পুজোর থিম উত্তম কুমার। সে ভাবেই হচ্ছে মণ্ডপসজ্জা। পাঁচ দিন ধরে হচ্ছে সাংস্কৃতিক। নরেন্দ্রপুরের কাছে আবাসন ভিক্টোরিয়া গ্রিন। এ বার পুজোর ১৫ বছর। খরচ বাঁচিয়ে আবাসিকেরা সাহায্য করেছেন কেরলে বন্যা দুর্গতদের। পুজোর দিনগুলিতে থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কামালগাজির কাছে আবাসন দেবলোক ডি কাসা’তে থাকে ২৮০টি পরিবার। তাদের পুজো এ বার ৫ম বর্ষে। সুরকার রাহুল দেববর্মণকে মনে রেখে তাদের থিম।
বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটের কাছে ‘এয়ারপোর্ট সিটি হাউজ়িং’-এর পুজো ১০ম বর্ষে পড়ল। শারদোৎসবের আগমনি সূচক শিউলি ফুল ঘিরেই এ বারের মণ্ডপসজ্জা। কৈখালির কয়লা-বিহার আবাসনের পুজো ১৮ বছরে পা দিল। থাকছে ষোলোআনা সাবেকিয়ানা। প্রতিমাও সাবেক। সোদপুর ওয়াটার সাইড রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্সের ১২তম বর্ষের পুজোয় মৎস্যকন্যার অবতারে দেবীর আরাধনা করা হচ্ছে।