প্রতীকী ছবি
কলকাতা মেট্রোয় ভিড় সামলানোর জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও তার ব্যবস্থাপনা এ বার নজর টানল বিদেশের। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সম্প্রতি কলকাতা মেট্রোর কথা উল্লেখ করেছে। করোনা আবহে বিশ্বের দরবারে গণ পরিবহণের নিরাপদ মডেল হিসেবে উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গ। মেট্রোর ভিড় নিয়ন্ত্রণে কী ভাবে ‘বট’ প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়েছে তারও উল্লেখ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে।
কী ভাবে কলকাতা মেট্রোয় দূরত্ব-বিধি মেনে ভিড় সামলানো হচ্ছে, তা জানতে আগেই আগ্রহ দেখিয়েছিল দিল্লি এবং মুম্বই মেট্রো। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করে এ নিয়ে টুইটও করেছিলেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। তবে বিদেশের প্রথম সারির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আসায় আত্মবিশ্বাস যেন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে কর্তৃপক্ষের।
দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি কী ভাবে ‘চ্যাট-বট’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেট্রোয় প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল যাত্রীধারণ ক্ষমতা (ডায়নামিক ক্যাপাসিটি) নির্ণয় করছে, সেই মডেল নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ব জুড়ে প্রায় থমকে যাওয়া অর্থনীতি সচল করতে কী ভাবে সংক্রমণের আশঙ্কাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজের গতি ফেরানো সম্ভব, এ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কর্মস্থল নিরাপদ রাখার পাশাপাশি সুরক্ষিত পরিবহণ ব্যবস্থাও গবেষণার উদ্দেশ্য। এ ছাড়া সুরক্ষিত পরিবহণে গৃহীত পরিকল্পনায় মানুষের আচরণ ও সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে নজরদারি এবং সংক্রমিতদের স্পর্শ (কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং) এড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহারও গবেষণার বিষয়।
কলকাতা মেট্রোয় ‘চ্যাট-বট’ প্রযুক্তিতে যাত্রীদের ই-পাস বুকিংয়ের সময়ে তাঁদের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়। তাঁদের নাম, কোন স্টেশন থেকে কোথায় সফর করতে চান, পছন্দের সময় প্রভৃতির মতো কিছু প্রশ্ন। এর উত্তর থেকেই মেট্রোয় প্রতি মুহূর্তে যাত্রীদের যাতায়াতের চাহিদা ও ধারণ ক্ষমতার হিসেব করছে ‘বট’। প্রতি মুহূর্তের ওই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যাচ্ছে, মেট্রোয় যাত্রীদের সংখ্যা, গন্তব্য, সময় ছাড়াও নানা তথ্য। মেট্রোর সফর নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কারা, তারও হদিস দিচ্ছে ওই যন্ত্র। এই সব তথ্য আগাম জানতে পারায় পরিকল্পনা তৈরিতে বিশেষ সুবিধা হচ্ছে বলেই মত মেট্রো কর্তৃপক্ষের। এই পরিস্থিতিতে পরিকাঠামোর সর্বাধিক ব্যবহার যেমন করা যাচ্ছে, তেমনই অপ্রয়োজনে রক্ষী মোতায়েন বা বাড়তি কাউন্টার খোলা রাখার মতো পরিস্থিতি এড়ানো যাচ্ছে। ফলে মানবসম্পদেরও উপযুক্ত ব্যবহার হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ই-পাসে বিশেষ রঙের কিউআর কোড ব্যবহার করায় তা দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছে। বার্কলের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সামগ্রিক এই ব্যবস্থাকেই দক্ষ ব্যবস্থাপনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রযুক্তি সরবরাহকারী সংস্থার কর্তা সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সরল, সুরক্ষিত এবং সকলে ব্যবহার করতে পারেন এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করাই ছিল চ্যালেঞ্জ। সেটা সম্ভব হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আরও উন্নত করার চেষ্টা চলছে।” মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যাত্রীরা যে ভাবে এই ব্যবস্থা মেনে চলছেন তা অভিনন্দনযোগ্য।”