ফাইল চিত্র
লকডাউন শিথিল হতেই গত এক মাস ধরে শহরে বাড়তে শুরু করেছে অপরাধ। কিন্তু সেই অপরাধের অন্তর্তদন্তে ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছচ্ছে দেরিতে, কোনও ক্ষেত্রে আবার যাচ্ছেই না! পুলিশের কর্তা থেকে আইনজীবীদের একটি অংশের আশঙ্কা, আনলক-১ পর্বে ওঠা এমন অভিযোগের পরিণতি কিন্তু ভয়ঙ্কর। কারণ, এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাবে।
অথচ তথ্যপ্রমাণ মজুত রাখতে খুন, খুনের চেষ্টা বা দুর্ঘটনার পরেই দ্রুত ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক দলের সদস্যদের পৌঁছে যাওয়ার কথা। এত দিন হচ্ছিলও তাই।
কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার দিকে নজর রাখলেই বোঝা যাবে যে, বদলেছে ওই পরিস্থিতি। পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি বড়বাজারের একটি বাড়ি থেকে শিশুকে ছুড়ে ফেলার ঘটনার দু’দিন পরে সেখানে যায় ফরেন্সিক দল। ফুলবাগানের আবাসনে শাশুড়িকে গুলি করে জামাইয়ের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাতেও দু’দিন পরে ফরেন্সিক দল গিয়েছিল। রিজেন্ট পার্কে প্রেমিকাকে গুলি করে খুনের ঘটনার তিন দিন পরে এবং হাওড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দমকলকর্মীর মৃত্যুর ঘটনার ন’দিন পরে ফরেন্সিক দল যায়! দিন কয়েক আগে ঠাকুরপুকুরে একই পরিবারের তিন জনের বিষ খাওয়ার ঘটনার তদন্তে এখনও ফরেন্সিক যায়নি।
কেন এমন হচ্ছে?
রাজ্য ফরেন্সিক বিভাগের একটি সূত্রের খবর, এই সময়ে যতগুলি দুর্ঘটনা ঘটেছে তার সব ক’টির ক্ষেত্রেই গুরুত্ব বুঝে আধিকারিককে ফোন করে ঘটনাস্থলে যেতে নির্দেশ দিচ্ছেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (ফরেন্সিক) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। আরও অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে যে ‘ক্রাইম সেকশন ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগ কাজ করে এসেছে, তার অফিসারদের বসিয়ে রাখা হচ্ছে। সেই জায়গায় পাঠানো হচ্ছে অন্য ডিভিশনের আধিকারিকদের।
আরও পড়ুন: সংক্রমিত অ্যাপ-ক্যাব চালকেরাও
অথচ তদন্তের গতিপ্রকৃতি বজায় রাখতে ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ‘মোবাইল ফরেন্সিক ইউনিট’ গঠিত হয়েছিল। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেই এই ইউনিটের মাধ্যমে মোবাইলে তৎক্ষণাৎ খবর পেতেন ফরেন্সিকের ‘ক্রাইম সেকশন ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের আধিকারিকেরা। অভিযোগ, আনলক-১ শুরু হতেই এই ইউনিটকে আর কাজে লাগানো হচ্ছে না।
দেরির কথা স্বীকার করে এডিজি (ফরেন্সিক) জানান, করোনার কথা ভেবেই কিছু নিয়ম করা হয়েছে। তাই দেরি হচ্ছে। তবে দুর্ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক তদন্তের ক্ষেত্রে যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, তা-ও দেখা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, “আপাতত ‘মোবাইল ফরেন্সিক ইউনিট’ বন্ধ রেখে নিজেই ফোনে নজরদারি রাখছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের ইউনিট সক্রিয় হবে। তা ছাড়া ‘ক্রাইম সেকশন ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের এক জন পদস্থ আধিকারিক ইস্তফা দেওয়ায় অন্য বিভাগের অভিজ্ঞ আধিকারিককে দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।”
যদিও এই যুক্তি মানছেন না আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক দলের যাওয়া উচিত। না হলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে যাবে! সে ক্ষেত্রে সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে অভিযুক্ত আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে।” জয়ন্তনারায়ণবাবুর প্রশ্ন, “করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশ যদি দুর্ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে যেতে পারে, ফরেন্সিক দল কেন যেতে পারে না?”