সূচনা শেঠ। ছবি: সংগৃহীত।
সালটা ২০২১। মায়ের মৃত্যুর পরে আড়িয়াদহে মামার বাড়িতে শেষ বার এসেছিলেন সূচনা শেঠ। তার পর থেকে পরিজনদের সঙ্গেও তিনি
যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু শান্ত, স্থির স্বভাবের উচ্চশিক্ষিত প্রিয় ভাগ্নি নিজের একমাত্র সন্তানকে খুন করতে পারেন, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না ওই তরুণীর মামা-মামি।
আড়িয়াদহের রামগড় এলাকার বাসিন্দা, আবৃত্তিকার-লেখক আরণ্যক বসুর বাড়িতেই জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে সূচনার। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভাগ্নির বিয়েও নিজের বাড়ি থেকেই দিয়েছিলেন আরণ্যক। মঙ্গলবার রাতে সমাজমাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যম মারফত খবরটি জানার পর থেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী রূপা বসু। বুধবার দুপুর থেকে তাঁদের দোতলা বাড়ির সামনে ভিড় জমে সংবাদমাধ্যমের। প্রথম দিকে অল্প কিছু কথা বললেও পরে আর কোনও কথাই বলতে চাননি ওই দম্পতি। বরং, সূচনার বাবাকেও ফোন করে বিরক্ত বা বিব্রত না করার অনুরোধ করেন।
সূত্রের খবর, সূচনার বাবা জয়গোপাল শেঠ ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। সূচনার জন্ম কলকাতায় হলেও বাবার বদলির চাকরির কারণে প্রথমে জলপাইগুড়ি, তার পরে চেন্নাইয়ে বাল্যকাল কেটেছে ওই তরুণীর। পরে তাঁরা চলে আসেন কলকাতায়। ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেন সূচনা। আমদাবাদে গিয়ে পিএইচ ডি-ও করেন। ছোটবেলার পরে আবার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে মামি রূপার কাছেই বেড়ে ওঠা সূচনার। রূপা বলেন, ‘‘একমাত্র নাতি চলে গেল। কিন্তু সূচনা ছেলেকে খুন করেছে, এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না।’’
বিকেল গড়াতেই বাড়ির সমস্ত দরজা-জানলা বন্ধ করে দিয়েছেন আরণ্যকেরা। খবর পেয়ে কামারহাটি পুরসভার স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় ওই বাড়িতে আসেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। আইনজীবী কোনও কথা বলতে বারণ করেছেন।’’ প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, মামার বাড়িতে থাকার সময়ে সকলের সঙ্গেই কথা বলতেন সূচনা। বিয়ের পর থেকে বেঙ্গালুরুতে থাকতেন তিনি। অবসরের পরে জয়গোপালও ডানলপে ফ্ল্যাট কেনেন। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে মা শৃঙ্খলা শেঠ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই সময়ে স্বামী বেঙ্কট রাম ও ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় আসেন সূচনা। মা মারা যাওয়ার পরে নিয়ম মেনে পারলৌকিক কাজ সেরে তিনি বেঙ্গালুরু ফিরে যান।
সূচনার এক আত্মীয়া বলেন, ‘‘সেই সময়েও ওঁর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখিনি। দাম্পত্যেও সমস্যা চোখে পড়েনি।’’ তবে ২০২২ সালে মায়ের বাৎসরিক কাজে কলকাতায় আসেননি সূচনা। বেঙ্কটের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য যে বিচ্ছেদের পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা-ও জানতেন না বলেই দাবি করেছেন মামা-মামি। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা বলেছেন, ‘‘তেমন ভাবে তো যোগাযোগই রাখত না। রাখলে হয়তো মনের কথা বলত।’’ এ দিন কোনও ভাবেই সূচনার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।