TMC

TMC: বাঁশদ্রোণী-কাণ্ডে জখম মলয়ের সঙ্গে নেতাদের ‘ঘনিষ্ঠতা’র ছবি

পুলিশ সূত্রের খবর, নব্বইয়ের দশকে রিজেন্ট পার্ক-বাঁশদ্রোণী এলাকায় অপরাধমূলক একাধিক কাজের সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল মলয়ের।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাঁশদ্রোণীতে দুই সিন্ডিকেটের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হওয়া মলয় দত্তের সঙ্গে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার বেশ কয়েক জন কর্তা ও কাউন্সিলরের ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্কের তথ্য হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

ঘটনার দিন আর এক গুলিবিদ্ধ বিশ্বনাথ সিংহ ওরফে বাচ্চাকে মোটরবাইকে চাপিয়ে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে নরেন্দ্রপুরের এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল তার ছেলে। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, হাসপাতালের পরিবর্তে বাচ্চাকে ওই নেতার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল কেন? পরে অবশ্য তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বাচ্চা এখনও সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তবে নরেন্দ্রপুরের ওই নেতা বর্তমানে কলকাতায় নেই। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি হিমাচলপ্রদেশে বেড়াতে গিয়েছেন।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, শুধুমাত্র নরেন্দ্রপুরের ওই তৃণমূল নেতা নন, মলয়ের সঙ্গে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার বেশ কয়েক জন পুরকর্তা ও কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রমাণ হাতে এসেছে। তদন্তকারীদের দাবি, রাজপুর-সোনারপুরের পুর নির্বাচনের সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর, পুরকর্তা ও সাংসদের সঙ্গে মলয়ের ছবি দেখা গিয়েছে। মলয়ের একাধিক আত্মীয় ওই এলাকার বাসিন্দা। সেখানে মলয়ের নিজেরও ফ্ল্যাট রয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, নব্বইয়ের দশকে রিজেন্ট পার্ক-বাঁশদ্রোণী এলাকায় অপরাধমূলক একাধিক কাজের সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল মলয়ের। পরে নিজের ভাবমূর্তি পাল্টাতে প্রোমোটারির কারবার শুরু করে। সেই সূত্রেই রাজপুর-সোনারপুরে জাল বিস্তার করেছিল মলয়।

তদন্তকারীদের দাবি, পুরভোটের প্রচারের মঞ্চের একটি ছবি তাঁদের হাতে এসেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, রাজপুর এলাকার তিন বারের এক মহিলা কাউন্সিলর মলয়ের জামায় দলীয় ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছেন ও তার সঙ্গে খোশগল্প করছেন। এ বারের পুর নির্বাচনে প্রথম বার টিকিট পেয়ে জেতা এক পুরকর্তার গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে মলয় তাঁকে সংবর্ধনা দিচ্ছে, এমন ছবিও মিলেছে।

দলের এক সাংসদের সঙ্গে মঞ্চে বসে মলয়ের খোশগল্পের ছবিও হাতে এসেছে পুলিশের। এ ছাড়া, বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর ও পুরকর্তার সঙ্গেও মলয়ের প্রচুর ছবি রয়েছে।

এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘পুর নির্বাচনে রাজপুর-সোনারপুরে বুথ লুট করার অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে ৮০-৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল শাসক দল।’’ নির্বাচনের দিন মলয়ের বাহিনী ওই সব এলাকায় ‘ভোট নিয়ন্ত্রণ’ করেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে দাবি তদন্তকারীদের। তাঁরা জানিয়েছেন, মলয় এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাঁশদ্রোণী-কাণ্ডের পাশাপাশি পুর কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সোনারপুরের এক সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরকর্তা বললেন, ‘‘এটাও এক ধরনের বিনিময় প্রথা। নির্বাচনে বুথ লুট করে শাসক দলের প্রার্থীদের জিতিয়েছিল মলয় ও তার অনুগামীরা। যার বিনিময়ে সে এলাকায় সিন্ডিকেটের ব্যবসা এবং জলাজমি বুজিয়ে অবৈধ নির্মাণকাজ করে গিয়েছে। বেআইনি কাজ করো এবং লাভের টাকা ভাগাভাগি করে নাও— এটাই এখন পুর উন্নয়নের নতুন মডেল। এতে পুরকর্তা থেকে কাউন্সিলর, সকলেই জড়িত।’’

এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব দাস। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। আমার দায়িত্ব হল, স্বচ্ছ এবং
সুষ্ঠু ভাবে পুরসভার পরিচালনা করা। আমি তাতেই মনোনিবেশ করেছি। কোনও সমস্যা হলে নির্দিষ্ট জায়গায় জানাব। কারও সঙ্গে দুষ্কৃতীদের যোগসাজশ থাকলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’’

সোনারপুর উত্তরের বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম বলেন, ‘‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। সে ক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নেই। পুলিশ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিক।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘অনেক কিছুই শোনা যায় এবং দেখাও যায়। দলীয় নেতৃত্বের উচিত, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া। এই ধরনের ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement