Resident Medical Officer

অশান্তির জটে আরএমও পদে থমকে নিয়োগ

অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীর আত্মীয় ও শাসক দলের ঘনিষ্ঠদেরই নিয়োগ করা হয়েছে। স্নাতকোত্তর এবং পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারীদের বাদ দিয়ে বাছাই করা হয়েছে সাধারণ এমবিবিএস-দের!

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২১ ০৬:০৬
Share:

প্রতীকী চিত্র

হাসপাতাল পরিচালনায় বড় ভূমিকা নেন রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসারেরা (আরএমও)। কিন্তু রাজ্যে তফসিলি জাতি ও জনজাতির জন্য সংরক্ষিত আরএমও পদে স্নাতকোত্তর বা পোস্ট ডক্টরাল প্রার্থী মিলছে না।

Advertisement

সমালোচনার ভয়ে ওই সব পদে উচ্চ ডিগ্রিধারীদের বদলে সাধারণ এমবিবিএস প্রার্থীদেরও নিয়োগ করতে পারছে না সরকার। কিছু দিন আগে তা করতে গিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। ফলে এমন ৩৭টি পদে থমকে নিয়োগ।

আরএমও ছাড়া হাসপাতাল চালানো দুষ্কর। ফলে ভোটের আগেই স্বাস্থ্য দফতর বাধ্য হয়ে অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছে যে, ওই সংরক্ষিত পদগুলিকে সাধারণ শ্রেণিতে আনা হোক। কিন্তু নির্বাচনের সময়ে আরএমও সমস্যার আশু সমাধানের সম্ভাবনা নেই। চিকিৎসকদের একাংশ এই সমস্যার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের নিয়োগ পদ্ধতির গলদকেই দায়ী করেছেন এবং ওই দফতরে চিঠি দিয়ে পূর্ণ মেধা-তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।

Advertisement

আরএমও পদে নিয়োগ নিয়ে মাস দেড়েক আগে স্বাস্থ্য দফতর প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে। ৮৯১টি শূন্য পদের মধ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘হেল্‌থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড’ ৬৪৭টি পদে সফল প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। সেই নিয়োগ ঘিরে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীর আত্মীয় ও শাসক দলের ঘনিষ্ঠদেরই নিয়োগ করা হয়েছে। স্নাতকোত্তর এবং পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারীদের বাদ দিয়ে বাছাই করা হয়েছে সাধারণ এমবিবিএস-দের! অভিযোগ, তৃণমূলের এক চিকিৎসক-নেতার ছেলে সাধারণ এমবিবিএস হওয়া সত্ত্বেও কলকাতার এক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আরএমও পদে নির্বাচিত হন। অথচ, সেখানে কোনও স্নাতকোত্তর বা পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারীর নাম ওঠেনি!

সে বার মোট ১৭ জন এমন চিকিৎসক তালিকায় ছিলেন, যাঁদের নাম সব মিলিয়ে ৬২টি পদে উঠেছিল! এক জনের নাম ওঠে ১৬টি বিভাগে। অন্য এক জন ১৪টি পদে সুযোগ পান। সমালোচনার মুখে সরকার নির্দেশ দেয়, দ্রুত ওই ১৭ জন চিকিৎসককে পছন্দের পদ বেছে নিয়ে বাকি পদ খালি করে দিতে হবে। তার পরে ৪৫টি পদ খালি হয়। সেগুলি অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত।

সূত্রের খবর, পরবর্তী কালে ওই ৪৫টি পদের মধ্যে মাত্র আটটিতে চিকিৎসক নিয়োগ করা গিয়েছে। তার মধ্যে দু’টি পদে মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং ছ’টিতে এমবিবিএস প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। বাকি পদে উপযুক্ত স্নাতকোত্তর চিকিৎসক না মেলায় নিয়োগ হয়নি।

সমালোচকদের বক্তব্য, অনগ্রসর শ্রেণির চিকিৎসক না মেলার কথাটা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। এমন বহু স্নাতকোত্তর এবং পোস্ট ডক্টরাল চিকিৎসক বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে রয়েছেন, যাঁরা ওই ইন্টারভিউ দিয়েছেন। তাঁরা যোগ্য এবং সংরক্ষিত শ্রেণিভুক্তও। অভিযোগ, ইচ্ছে করেই তাঁদের নিয়োগ করা হচ্ছে না। কারণ, ওই পদগুলিতে প্রভাবশালীরা নিজেদের লোক ঢোকানোর পরিকল্পনা করেছেন। ভোটের পরে হাওয়া বুঝে নিয়োগ হবে।

স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে শোনা যাচ্ছে, প্রথম বার অধিকাংশ পদে স্নাতকোত্তর বা পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রিধারীর বদলে সাধারণ এমবিবিএস নিয়োগ করায় তীব্র সমালোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় বার নাম বাছাইয়ের সময়েও দেখা যায়, বিভিন্ন সুপারিশের জেরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। বিতর্ক এড়াতে তখন স্বাস্থ্য দফতরই নিয়োগ স্থগিত রাখে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমার কাছে কোনও উত্তর নেই।’’ তবে চিকিৎসক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্‌থ সার্ভিস ডক্টর্স’ এবং ‘হেল্‌থ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’ স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়ে দাবি করেছে, অবিলম্বে এই নিয়োগ নিয়ে তদন্ত হোক এবং পূর্ণাঙ্গ মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement