ধৃত আরসালান পারভেজ। ছবি: ফেসবুক।
মাঝরাতে শেকসপিয়র সরণি দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়া জাগুয়ারের চালককে গ্রেফতার করল পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ আগেই জানতে পেরেছিল, ওই গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন কলকাতার একটি নামী রেস্তরাঁ চেনের নামে। পরে জানা যায়, ঘাতক ওই জাগুয়ারটি সেই সময় চালাচ্ছিলেন ওই রেস্তরাঁ চেনের মালিকের ছেলে আরসালান পারভেজ। এর পরেই বছর বাইশের আরসালানকে গ্রেফতার করে শেকসপিয়র থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত আরসালান পারভেজকে শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হবে। এই গাড়ি দুর্ঘটনায় পুলিশ জাগুয়ারের চালকের বিরুদ্ধে আগের থেকে অপেক্ষাকৃত কঠোর ধারায় মামলা দায়ের করেছে। প্রথমে ৩০৪এ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল। সেটা অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা হলেও জামিনযোগ্য ছিল। কিন্তু পারভেজকে গ্রেফতারের পর ৩০৪ (পার্ট II) ধারায় মামলা করে। এটি জামিনঅযোগ্য ধারা। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন বিচারকের কাছে আরসালানকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে। কারণ হিসেবে ওই সূত্রটির মত, ধৃত সেই সময় কোথা থেকে আসছিলেন, অত জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন কেন, কী ভাবেই বা দুর্ঘটনা ঘটল— এ সব যেমন জানার, তেমনই গাড়িচালক মত্ত ছিলেন কি না সেটাও জানা প্রয়োজন। ঘটনার এত ঘণ্টা পরে মেডিক্যাল পরীক্ষায় সেটা ধরা পড়বে না। তাই পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ পেতেই ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে পেতে চাইছে পুলিশ।
আরো পড়ুন: মধ্যরাতের কলকাতায় বেপরোয়া জাগুয়ার, মার্সিডিজকে ধাক্কা মেরে পিষে মারল ২ জনকে
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আরসালান পারভেজরা দুই ভাই। দুজনেই বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত পারভেজ এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের পাঠ নিয়েছেন। আখতার তাঁর সংস্থার সবচেয়ে পুরনো আউটলেট অর্থাৎ পার্ক সার্কাস মোড়ের ‘আরসালান’ এক মালিকানা তাঁকেই দিয়েছেন। বেকবাগানের কাছে পারভেজ আখতারদের পারিবারিক বাড়ি। তবে, আরসালান পারভেজ ওই বাড়িতে থাকতেন না। সায়েন্স সিটির সামনে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন তিনি। যদিও ওই রাতে তিনি যে জাগুয়ারটি চালাচ্ছিলেন, সেটি রাখা থাকত বেকবাগানের বাড়িতে।
এ বিষয়ে আরসালান রেস্তরাঁর মালিকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু জানিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লাইভ: টইটম্বুর রাস্তায় শম্বুকগতির যান, ট্রেন-বিমানেও দেরি, নাভিশ্বাস মহানগরের
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। খতিয়ে দেখেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি দু’টি ও তার যন্ত্রাংশ। এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্থ দু’টি গাড়িই উচ্চ প্রযুক্তির। গাড়ি দু’টির মধ্যেই ডেটা রেকর্ডারও রয়েছে। সেখান থেকেই গাড়ির গতিবেগ, সংঘর্ষের সময় সংক্রান্ত তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। তবে বৃষ্টির কারণে রাস্তা থেকে কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখবেন তাঁরা।
১৫ অগস্ট রাতে এই শহরে অন্য একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে আকাশ মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা সাজানোর সময়ে পুলিশ সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ আনে পিডিপিপি ধারায়। এ দিন আকাশের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, ‘‘একই ধরনের অপরাধে কলকাতা পুলিশ দু’ধরনের মামলা রুজু করছে কেন? আমার মক্কেলের ক্ষেত্রে পুলিশের গার্ডরেল ভাঙার জন্যে যে ধারায় অভিযোগ আনা হয়, আজকে তো ধৃত চালক পুলিশের কিয়স্ক উড়িয়ে দেওয়ার পরেও তার ক্ষেত্রেও ওই ধারায় মামলা আনা হল না কেন?’’