ফের বিস্ফোরক রত্না চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে হাজার মন্তব্য করলেও, তিনি যদি বাড়ি ফিরতে চান, তাতে কোনও আপত্তি নেই। এমনকি ১০ বছর পর ফিরলেও সমস্যা হবে না। বুধবার সকালে এমন কথাই বলেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্নাদেবী। কিন্তু সন্ধ্যা হতেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন তিনি। জানালেন, শোভনের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন।
কারণ, তত ক্ষণে রত্নার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন শোভন। প্রকাশ্যে এনেছেন ‘চিকু’ ওরফে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। জানিয়েছেন, রত্নাদেবী তাঁকে বলেছিলেন, চিকুকে যদি পছন্দ না হয়, তা হলে শোভন স্ত্রীকে ডিভোর্সও করতে পারেন। পাশাপাশি, শোভন ‘জিআরসি’ নামে একটি কোম্পানির উল্লেখও করেন। যে কোম্পানি গোপাল এবং চিকুর সঙ্গে রত্নাই বানিয়েছিলেন বলে শোভনের দাবি। আর সংবাদমাধ্যমে এ সব কথা শোনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রত্না। বললেন, ‘‘সকালে ভুল বলেছি। ফিরিয়ে নিয়ে এসে ওকে নিয়ে কী করব! এ বার আমি কী করতে যাচ্ছি, তা শোভনবাবু বুঝতে পারবেন।’’
রত্না আরও বলেন, “তিনি যা মিথ্যে কথা বলেছেন, তার উত্তর দিতে হবে শোভনবাবুকে। যা মনে আসছে বলে চলেছেন। এ সব করে কোনও লাভ নেই। সংবাদমাধ্যমে তিনি যা বলেছেন, সেই সিডি নিয়ে আমি কোর্টে যাব। বৈশাখী ও তার মেয়েকে সুপারি কিলার দিয়ে মেরেছি? এ সব কী বলছেন? ওদেরকে মারা আর না মারা সমান। একটা নোংরা লোক। নোংরা, নোংরা কথা বলছেন।”
আরও পড়ুন: বৈশাখীকে আড়াল করে রত্নার ‘প্রেমিক’ চিকুকে সামনে আনলেন শোভন
আরও পড়ুন: শোভনের বৈশাখী-যোগ কবে, কী ভাবে
তাঁর বক্তব্য, “আমি কোন দিন বলেছি, অভিজিতের সঙ্গে প্রেম করেছি, বেশ করেছি। এ সব দেখার পর ভাবতে হচ্ছে, এ বার কী করবে? ২২ বছর সংসার করার পর বদনাম দিচ্ছে। তিনি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মায়ের জন্য ব্যথিত। আমার মায়ের মৃত্যুর সময় এসে দাঁড়িয়েছিলেন? কোর্টে এর প্রমাণ করতে হবে। না পারলে, সবার সামনে ১০ বার কান ধরে উঠবোস করতে হবে। আমার সন্তানদের নামেও মিথ্যে কথা বলছেন।’’
আরও পড়ুন: ‘প্রাসাদ-রাজকন্যা’ ছেড়ে কি সন্ন্যাসের পথে মন্ত্রী, নাকি ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে অন্য দরবারে?
এর আগে এ দিন দুপুরে শোভন সম্পর্কে কী বলেছিলেন রত্না?
প্রশ্ন: এখনও পর্যন্ত মেয়র পদত্যাগ করেননি। আপনার কী মনে হয়, ওঁকে কি পুনরায় ওই পদে রেখে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে? না উনি পদত্যাগ করবেন?
রত্না: আমি ঠিক বলতে পারব না। এটা সম্পূর্ণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাপার। দিদি কী সিদ্ধান্ত নেবেন বা কী নিয়েছেন, সেটা আমার মনে হয় একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না।
প্রশ্ন: হঠাত্ করে কেন এ রকম হয়ে গেল?
রত্না: রাজনৈতিক কেরিয়ার তো ঠিকঠাকই ছিল, উনি বিপথে চলে গেলেন। রাজনৈতিক কেরিয়ারের তো কোনও দোষ নেই। রাজনীতি করতে এসে উনি ভগবানের কাছ থেকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে দু’হাত ভরে আশীর্বাদ পেয়েছেন। কিন্তু, নিজেই চলে গেলেন বিপথে। সে জন্য তাঁর কেরিয়ার আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। দেখুন, আমি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। আমার শোভনবাবুর কাছে অর্থ নেওয়ারও কোনও প্রয়োজন ছিল না। কারণ, যে দিন শোভনবাবুকে আমি বিয়ে করেছিলাম সে দিন তিনি কাউন্সিলর ছিলেন। মাসে ৫০০ টাকা মাইনে পেতেন। তখন কিন্তু আমার বাবা একজন ধনী ব্যবসায়ী। সেই জায়গা থেকে আমি শোভনবাবুকে বিয়ে করেছিলাম। শোভনবাবুর ক্ষমতা দেখে আমি বিয়ে করিনি। তাই আমাকে ফোন করুক না করুক, ওঁর উচিত ছিল ছেলেমেয়েদের ফোন করে জিজ্ঞাসা করা, তোরা ঠিক আছিস কি না বা আমি ঠিক রেখেছি কি না। কিন্তু সেটা তিনি খোঁজ নেননি, ফোন করেননি।
প্রশ্ন: এর পরেও কী আপনি চাইবেন উনি ফিরে আসুক?
রত্না: দেখুন স্বামীটা তো আমার। যে দিন অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে করেছিলাম সে দিনই ঠিক করেছিলাম যত বিপদই আসুক হাত ছাড়ব না। হাতটা ছেড়ে তো উনি চলে গেছেন। তো উনি যদি আবার ফিরে আসেন তা হলে কেন নয়? উনি আমার সন্তানেদের বাবা, আমার স্বামী, পরিবারের লোক। সবার মুখের দিকে চেয়ে আমি নিশ্চয়ই চাইব তিনি ফিরে আসুক। কারণ সেই মানুষটাকে আমি ভালবাসি, তাই তাঁর কোনও রকম ক্ষতি আমি চাই না।