—প্রতীকী ছবি।
দমদম পার্ক ভারতচক্রে ঝাঁপ ফেলেছে সর্বভারতীয় রেস্তরাঁ চেন। বালিগঞ্জ কালচারালে বিশ্ববিখ্যাত বিলিতি আইসক্রিমের ঘাঁটি। আর টালা পার্কের পিছনে টালা প্রত্যয় ঘিরে জ্বলজ্বলে পর পর এলইডি পর্দা। বছর সাতেক আগেও ওই তল্লাট পুজোহীন অন্ধকার আর নৈঃশব্দ্যে ডুবে থাকত। ব্র্যান্ডিং, বিজ্ঞাপনী জৌলুস আগেও ছিল। ইউনেস্কো স্বীকৃতি পরবর্তী যুগে বাণিজ্যিক আকর্ষণেও কলকাতার পুজো নতুন চুড়ো ছুঁতে চলেছে।
২০১৯-এর পুজো শেষে সংশ্লিষ্ট নানা জন ও বিভিন্ন বণিকসভার হিসাব ছিল, কলকাতার পুজোয় সব মিলিয়ে ৫০ হাজার কোটির আর্থিক লেনদেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি রিপোর্টে প্রকাশ, ২০১৯-এ মণ্ডপ ও প্রতিমা শিল্প, পুজোর কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া, পত্রিকা প্রকাশের বহর বা ‘ক্রিয়েটিভ ইকনমি’ ৩৩ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। ২০২৩-এ সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্র মিলিয়ে কলকাতার পুজো সংক্রান্ত ব্যবসার বহর ৭০ হাজার কোটির কাছাকাছি বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত।
কলকাতার পুজো আন্তর্জাতিক পরিসরে মেলে ধরার একটি মঞ্চের কর্তা ধ্রুবজ্যোতি বসু বলছেন, ‘‘মণ্ডপে জনবিস্ফোরণের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের পর্যটক, শিল্পরসিক মহলকে আকর্ষণ করাটা জরুরি। কলকাতার পুজোর সংখ্যা ধরলে তার আর্থিক পরিধি মুম্বইয়ের গণেশ পুজোর থেকেও বড়! কর্পোরেট লগ্নিও এ বার প্রাক্-অতিমারি পুজোকে ছাপিয়ে গিয়েছে।’’ মহালয়ার তিন দিন আগে থেকে বিভিন্ন পুজোর শিল্প সম্ভার দেখার অনুষ্ঠান বা প্রিভিউ শোয়ের সঙ্গে ইউনেস্কো, ব্রিটিশ কাউন্সিল শরিক হওয়ায় পুজোর কৌলীন্যও বেড়েছে। সেই সঙ্গে পর্যটন ও পৃষ্ঠপোষকতারও মাত্রা বেড়েছে।
হাতিবাগান সর্বজনীনের কর্তা তথা কলকাতার পুজোর সম্মিলিত মঞ্চের শাশ্বত বসুও খুশি, পুজোর ‘স্পনসর’ নিয়ে। পুজোর বাজেটও গড়ে ২০-৩০ শতাংশ বাড়ছে। তবে তিনি বলছেন, ‘‘মুম্বইয়ের গণেশপুজোর হোর্ডিংয়ের দর ৫০০০ হলে আমাদের পুজোর হোর্ডিং ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। কলকাতাকে আরও এগোতে হবে। কারা, কত জন কলকাতার পুজোয় আসছেন সেটার উপরেই কর্পোরেট লগ্নি নির্ভর করবে।’’ পেশাদার কর্পোরেট কর্তা তথা দমদম পার্ক ভারতচক্রের কর্মকর্তা প্রতীক চৌধুরী বলছেন, ‘‘নরম পানীয়, মদ, ইস্পাত সংস্থা থেকে সর্বভারতীয় পণ্যের গোষ্ঠী আরও জোরদার ভাবে ঝাঁপাচ্ছে।’’ বড়িশা ক্লাবের সুদীপ পোল্লে বা কাশী বোস লেনের সোমেন দত্ত বলছেন, ‘‘এ বার মণ্ডপে যাতায়াতের ফ্লেক্সে মোড়া টানেলের ভাল দর। হোর্ডিং, গেট ছাড়াও লম্বা রডের মাথায় ‘ললিপপ’ বা চৌকো বাক্সে বিজ্ঞাপনও ভাল চলছে।’’ টালা প্রত্যয়ের শতকরা ৮৫ ভাগ বিজ্ঞাপনই এলইডি-তে! দেখা, শোনার বিজ্ঞাপনই আগামীতে বাড়বে, প্রত্যয়ী কর্মকর্তারা।
কিন্তু মন্ত্রীদের পুজোই কি পৃষ্ঠপোষকতার ধারে-ভারে এগিয়ে? মানছেন না বালিগঞ্জ কালচারালের অঞ্জন উকিল। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোটা কোথায়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বড় পুজোর পাশের ছোট পুজোও স্পনসরের নজরে আসে।’’ ত্রিধারা সম্মিলনীর কর্তা, পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলছেন, ‘‘স্পনসর-লক্ষ্মী সহায় হলেও, লক্ষ্মীপুজোর মধ্যে হোর্ডিং সরাতে হবে।’’