(বাঁ দিকে) তৃণমূলের সাংসদ অভিনেত্রী নুসরত জাহান। অভিযুক্ত সংস্থার ডিরেক্টর রাকেশ সিংহ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ফ্ল্যাট প্রতারণাকাণ্ডে ‘বিতর্কিত’ সংস্থার ডিরেক্টর রাকেশ সিংহকে আবার তলব করল ইডি। এর আগে এক বার ইডি দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে রাকেশকে দফতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সংস্থা আবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। ইডি সূত্রে খবর, এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরত জাহানের কাছ থেকেও আরও কিছু নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁকে সশরীরে হাজিরা দিতে বলেনি কেন্দ্রীয় সংস্থা।
‘সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ নামে সংস্থার ডিরেক্টর রাকেশ। অভিযোগ, ২০১৪-’১৫ সালে ৪০০-র বেশি প্রবীণ নাগরিক এই সংস্থায় অর্থ জমা দেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। বদলে তাঁদের এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা না পেয়েছেন কোনও ফ্ল্যাট, না ফেরত পেয়েছেন টাকা। বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডার অভিযোগ ছিল, নুসরত এই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর।
শঙ্কুদেবের আরও অভিযোগ, এ বিষয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। নুসরতের বিরুদ্ধে আদালতেও মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, আদালতের শমন পেয়েও হাজিরা দেননি সাংসদ তথা অভিনেত্রী। তাই শেষে প্রতারিতদের নিয়ে ইডি দফতরে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসেন শঙ্কুদেব। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পরে এ-ও দাবি করেন, ‘প্রতারণার’ টাকা দিয়ে পাম অ্যাভিনিউতে নুসরত ফ্ল্যাট কিনেছেন। যদিও সেই সব অভিযোগই উড়িয়ে দেন সাংসদ-অভিনেত্রী।
ফ্ল্যাট প্রতারণাকাণ্ডে নুসরতের নাম জড়ানোর পর তিনি একটি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, ‘সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ থেকে ঋণ নিয়ে তিনি ফ্ল্যাট কিনেছেন। তার পর সুদ-সহ সেই ঋণ শোধও করেছেন বলে রীতিমতো কাগজপত্র দেখিয়ে দাবি করেন নুসরত। কিন্তু রাকেশ অন্য কথা বলেছিলেন। তাঁর পাল্টা দাবি ছিল, ওই সংস্থা থেকে নুসরতকে কোনও ঋণ তিনি দেননি। আনন্দবাজার অনলাইনকে রাকেশ এ-ও জানান, তিনি নুসরতের দাবির কথা শুনে ‘শক্ড’ (স্তম্ভিত)!
ফ্ল্যাট সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডি গত ১১ সেপ্টেম্বর রাকেশকে ডেকে পাঠিয়েছিল। তার ঠিক পরের দিনই হাজিরা দিতে ডাকা হয়েছিল নুসরতকে। রাকেশ এবং নুসরত ছাড়াও এই ঘটনার সঙ্গে আর এক অভিনেত্রীর নাম জড়ায়। রূপলেখা মিত্র নামের সেই অভিনেত্রীকেও ইডি ডেকেছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। নুসরতের এক দিন পরে তাঁর ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল।
নুসরত নির্দিষ্ট দিনেই ইডি দফতরে হাজিরা দিয়ে এসেছিলেন। তাঁকে দীর্ঘ সাড়ে ছ’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দফতর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘‘ইডির দিক থেকে যা যা চাওয়ার, আমার দিক থেকে যা যা দেওয়ার, সব দেওয়া হয়ে গিয়েছে।’’ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, আরও কিছু নথি নুসরতের কাছ থেকে চেয়েছে ইডি।
নুসরত হাজিরা দিলেও তার আগের দিন রাকেশকে ইডি দফতরে যেতে দেখা যায়নি। তাঁকে আগামী সপ্তাহে আবার ডেকে পাঠানো হয়েছে। এ বার তিনি হাজিরা দেবেন কি না, সেটাই দেখার।