—গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
বন্দর এলাকার একদা কংগ্রেস এবং অধুনা বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহ সোমবার নথি দেখিয়ে দাবি করলেন, তিনি দু’বছর আগে রাজ্য প্রাশাসনের সমস্ত স্তরে জানিয়েছিলেন, কলকাতার আটটি এলাকায় ‘বেআইনি’ বহুতল নির্মাণ চলছে। ওই সমস্ত নির্মাণে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত বছর জুন মাসে রাকেশ চিঠি লিখেছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর ডিরেক্টর এবং কলকাতা জ়োনের জয়েন্ট ডিরেক্টরকে। রবিবার রাতে গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনার পর সেই নথি প্রকাশ্যে এনে রাকেশ আবার দাবি করেছেন, পুরসভা এবং নবান্নের অগোচরে গার্ডেনরিচের ঘটনা ঘটেনি।
রাকেশের এ হেন দাবির পাল্টা তৃণমূল তাঁকে বিঁধতে তাঁর বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ রয়েছে, সেগুলিকে ‘হাতিয়ার’ করেছে। তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘একটি ঘটনা ঘটেছে। মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থতা নিয়েও অকুস্থলে পৌঁছেছিলেন। জখমদের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে দেখাও করেছেন। প্রশাসন যা যা পদক্ষেপ করার করছে। তৃণমূল কোনও অনৈতিক কাজকে সমর্থন করে না।’’ পাশাপাশিই, রাকেশের উদ্দেশে শান্তনু বলেন, ‘‘যিনি অভিযোগ তুলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে সেগুলির নিয়ে তিনি ভাবুন। বাকিটা নিয়ে তাঁকে না ভাবলেও চলবে।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাকেশকে মাদক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখন তিনি বিজেপি করতেন। তার আগে তিনি ছিলেন কংগ্রেসের নেতা। ২০১৬ সালে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী হিসাবে ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে বন্দর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন রাকেশ। বন্দর এলাকার রাজনীতিতে বরাবরই রাকেশ-ফিরহাদ ‘যুযুধান’ বলে পরিচিত।
রাকেশের অভিযোগ, কলকাতা পুরসভার আটটি ওয়ার্ডে বেআইনি বহুতল নির্মাণ চলছে। সেই ওয়ার্ডগুলি হল ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৮০, ১৩৩, ১৩৪ এবং ১৩৫ নম্বর। ঘটনাচক্রে, রবিবার রাতের ঘটনাটি ঘটেছে ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে। পুরনো নথি প্রকাশ্যে এনে রাকেশ দাবি করেছেন, ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রথম চিঠি লিখে প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থাকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করান। সেই চিঠি পাঠানো হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, বিধানসভার স্পিকার, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী, কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন, রাজ্যের পুর কমিশনার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং ডিজি (দমকল)-কে। রাকেশের আরও দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম চিঠি দেওয়ার পর জুন মাসে ফের তিনি মনে করিয়ে দ্বিতীয় একটি চিঠি দেন। ফেব্রুয়ারিতে যাঁদের চিঠি লিখেছিলেন, জুনে তাঁদেরই চিঠি লিখেছিলেন বলেও দাবি রাকেশের। তাঁর আরও দাবি, ওই আটটি ওয়ার্ডে মোট ১২০০টি বহুতল ‘বেআইনি’ ভাবে নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে বলে তিনি তথ্যের অধিকার আইনে মামলা করে জেনেছেন।
ইডিকে চিঠি দিয়ে রাকেশের অভিযোগ ছিল, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলি কাউন্সিলর, বন্দর এবং লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন থানা এবং প্রোমোটারদের ‘অঘোষিত সিন্ডিকেট’ চলছে। পুরসভা এবং প্রশাসন সে সবই জানে। বহুতল ভাঙার ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আট জনের মৃত্যু হয়েছে। রাকেশ বলেন, ‘‘রবিবার যা হয়েছে তা কিছুই নয়। একটা মৃদু ভূমিকম্পও যদি কলকাতায় হয়, তা হলে বন্দর এলাকায় লাশের পাহাড় দেখতে হবে।’’