অপরিচ্ছন্ন: দক্ষিণেশ্বর রেল কলোনির সামনে জমেছে আবর্জনা।ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
পুরসভা বলছে, রেল কলোনি এলাকায় ডেঙ্গি হয়েছে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা ডেঙ্গি সংক্রমণের কোনও খবর পাননি!
ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে এমনই দ্বিমত তৈরি হয়েছে কামারহাটিতে। যদিও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণেশ্বর রেল কলোনি এলাকার বস্তিতে ঘুরলেই জানা যাচ্ছে, পুজোর আগে থেকে প্রায় ৩০-৩৫ জনের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। অজানা জ্বরে ভুগেছেন আরও অনেকে।সেই পরিসংখ্যান অবশ্য মানতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ। গত ৫ নভেম্বর পুরসভাকে চিঠি দিয়ে তাঁরা দাবি করেছেন, রেল কোয়ার্টার্সে যে কর্মীরা থাকেন তাঁদের পরিবারে কারও ডেঙ্গি হয়নি। আর রেলের জমিতে অবৈধ ভাবে বস্তি তৈরি করে থাকা বাসিন্দাদের ডেঙ্গির দায় রেলের নয়। বরং তাঁদের জন্যই এলাকা অপরিচ্ছন্ন থাকছে, তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এর ফলে রেল কোয়ার্টার্সের আবাসিকদের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘কে রেলকর্মী আর কে বস্তিবাসী, সেই বুঝে মশা কামড়ায় বলে তো জানা নেই! গোটা এলাকা আবর্জনায় ভর্তি, নিকাশি নালা বন্ধ। সেখানে এডিস মশার লার্ভাও মিলেছে। তাই রেলকে কলোনি এলাকা সাফ করতে বলেছিলাম। তাতে এমন উত্তর, ভাবা যায় না।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর শঙ্করী ভৌমিক বলেন, ‘‘রেল কলোনির মশা তো অন্য এলাকাতেও যেতে পারে। পুরসভার তরফে আমরা যতটা সম্ভব রেল কলোনিতে কাজ করি। কিন্তু তাতেও তো রেলের অনেক নিয়ম আছে।’’
পুজোর আগে থেকেই দক্ষিণেশ্বর রেল কলোনি এলাকায় ব্যাপক হারে ডেঙ্গি ছড়াতে শুরু করে। মারা যান এক মহিলাও। শেষে রেলের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় বাসিন্দারা বৈঠকে বসেন। রেল কলোনি এলাকায় কেন ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে, আলোচনায় তার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ১৭ সেপ্টেম্বর শিয়ালদহের ডিআরএম-কে চিঠি পাঠায় পুরসভা। চিঠিতে জানানো হয়, রেল কলোনির বিভিন্ন প্রান্তে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশার আস্তানা তৈরি হয়েছে। চার দিকে আবর্জনা জমে আছে। বুজে গিয়েছে নিকাশি নালা। এ ছাড়াও স্তূপাকৃতি হয়ে থাকা টায়ার, আবর্জনা, প্লাস্টিকে জল জমে রয়েছে, যাতে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে। কলোনির দু’টি বুজে যাওয়া নিকাশি নালা ও আবর্জনায় ভরা পুকুরেও ডেঙ্গির মশার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।
কামারহাটির চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বিমল সাহার অভিযোগ, ‘‘রেলকে জানালেও তাঁরা কিছুই করেননি। বাধ্য হয়ে পুরসভার তরফে ডেঙ্গি মোকাবিলায় নামতে হয়। চিকিৎসক থেকে রক্ত পরীক্ষার ভ্রাম্যমাণ গাড়ি— সব ব্যবস্থা করা হয়।’’ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রেল কলোনির চার দিকে জঙ্গল ও আবর্জনায় ভর্তি। নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে জল উপচে পড়ছে। পুকুর কচুরিপানায় ভর্তি। নির্দিষ্ট শৌচাগার না থাকায় যেখানে সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করছেন বাসিন্দারা।
যদিও পুরসভাকে পাঠানো চিঠিতে রেল দাবি করেছে, নিয়মিত পুকুর ও নর্দমা সাফ করা হয়। রেলের এই দাবি মানতে নারাজ বস্তির বাসিন্দারা। এক বাসিন্দা কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে হইচই হওয়ার পরে এক দিন রেলের কর্মীরা এসে কোনও মতে একটা পুকুর সাফ করে আবর্জনা পাড়ে রেখেই চলে গেলেন। কোনও ঝোপ-জঙ্গল, নর্দমা সাফ করেননি।’’
পুরকর্তারা জানান, ২০১৮ সালে ওই রেল কলোনিতে শৌচাগার তৈরির জন্য জায়গা চেয়ে রেলের কাছে আবেদন জানানো হলেও কিছু হয়নি। রেল অবশ্য তাদের চিঠিতে জানিয়েছে, পুরপ্রধান যদি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ভাবে সহযোগিতা করে দখলদার তোলার ব্যবস্থা করেন তা হলে ওই এলাকায় ডেঙ্গি মোকাবিলার পাকাপাকি সমাধান হবে এবং শৌচাগার তৈরিরও প্রয়োজন হবে না। পুরপ্রধানের অনুমতি মিললেই উচ্ছেদের কাজ করবে রেল। গোপালবাবু অবশ্য এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘দখলদার তোলার দায়িত্ব আমার নয়।’’