এখনও বেশির ভাগ লোকাল ট্রেনেই সিসি ক্যামেরা নেই। প্রতীকী ছবি
রাতের লোকাল ট্রেনে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করল দক্ষিণ-পূর্ব রেল। হাওড়া-খড়্গপুর-মেদিনীপুর শাখায় রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সমস্ত লোকাল ট্রেনে মহিলাদের সাহায্য করার জন্য ওই ব্যবস্থা থাকছে। এর আগে দূরপাল্লার ট্রেনে ‘আপ কি সহেলী’ নামে একটি বিশেষ ব্যবস্থা চালু করে সাফল্য পেয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেল। সেই ব্যবস্থায় ট্রেন ছাড়ার সময়ে মহিলা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ফোন নম্বর নিয়ে রাখেন রেলরক্ষী বাহিনীর মহিলা কনস্টেবলেরা। তাঁরাই যাত্রীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করে নেন। তার পরে গোটা যাত্রাপথে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন আরপিএফের মহিলা কর্মীরা। চলন্ত ট্রেনে কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে তা সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ মারফত জানানো যায়। সেই বার্তা পৌঁছে যায় নিকটবর্তী আরপিএফ এবং জিআরপি কর্মীদের কাছে। সেই পরিকল্পনায় সাফল্য মেলার পরে লোকাল ট্রেনের মহিলা যাত্রীদের জন্য প্রায় একই ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করল দক্ষিণ-পূর্ব রেল।
‘কনভয় নাইট ফ্যালকন’ নামে ওই ব্যবস্থায় মহিলা যাত্রীদের জন্য একটি মোবাইল নম্বর (৯০০২০৮১৭২৭) নির্দিষ্ট করা হয়েছে। লোকাল ট্রেনে সফররত মহিলা যাত্রীরা ওই নম্বরে ফোন করলেই তাঁদের মোবাইলে একটি ‘গুগল লিঙ্ক’ চলে আসবে। সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই সংশ্লিষ্ট যাত্রী ওই সুরক্ষা ব্যবস্থায় যোগ দিতে পারবেন। অনলাইনে সেই বিশেষ নিরাপত্তা কনভয়ে যোগ দেওয়া মাত্রই মোবাইলের স্ক্রিনে যাত্রাপথের বিভিন্ন স্টেশনে মোতায়েন থাকা আরপিএফের মহিলা কনস্টেবলদের দেখতে পাবেন ওই যাত্রী। সেই সঙ্গে ওই যাত্রীকেও দেখা যাবে। কোথাও কোনও সমস্যায় পড়লে ফোনে কথা বলা ছাড়াও বিশেষ পরিস্থিতিতে শুধু ছবি বা ভিডিয়ো-ও পাঠানো যাবে। সেখান থেকেই পরিস্থিতি আঁচ করে মহিলার অবস্থান জেনে নিয়ে কাছাকাছি স্টেশনে তাঁকে সাহায্য করার জন্য হাজির থাকবেন আরপিএফ কর্মীরা। স্মার্টফোন যাঁদের নেই, তাঁরা ওই নম্বরে সরাসরি ফোন করলেও সাহায্য পাবেন বলে জানিয়েছে রেল। এই ফোন নম্বরটি রেলকর্মীরা এর পরে প্রতিটি কামরায় গিয়ে যাত্রীদের জানিয়ে আসবেন।
এই ব্যবস্থায় কনভয়ের বিশেষ দল হাওড়া, সাঁতরাগাছি, উলুবেড়িয়া, মেচেদা, পাঁশকুড়া, বালিচক, খড়্গপুর এবং মেদিনীপুর স্টেশনে রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে উপস্থিত থাকবে লোকাল ট্রেনের মহিলা যাত্রীদের সাহায্য করতে। এ প্রসঙ্গে রেলের এক কর্তা জানান, প্রতিটি ট্রেনের মহিলা কামরায় পাহারা বসানোর মতো পর্যাপ্ত রক্ষী রেলের কাছে নেই। এখনও বেশির ভাগ লোকাল ট্রেনেই সিসি ক্যামেরা নেই। সেই কারণে বেশির ভাগ সময়েই মহিলাঘটিত অপরাধের খবর পেতে দেরি হয়ে যায়। এর পাশাপাশি অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্যভান্ডার না থাকায় ব্যবস্থা নিতেও দেরি হয়।
নতুন এই ব্যবস্থা চালু করার ফলে মহিলা যাত্রীদের অবস্থান, রাতের ট্রেনে তাঁদের সফর সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি কোথায় নিরাপত্তা নিয়ে মহিলা যাত্রীদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, তা-ও নির্ণয় করা সহজ হবে। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আইজি এবং প্রিন্সিপ্যাল সিকিউরিটি কমিশনার ডি বি কাসার বলেন, ‘‘মহিলা যাত্রীদের সুরক্ষা এবং ভরসা দেওয়ার পাশাপাশি সমস্যা সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করাও ওই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’’
সম্প্রতি লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরায় রাতের দিকে নিগ্রহ এবং হেনস্থার একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। তার প্রেক্ষিতেই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের নতুন এই উদ্যোগ দিশা দেখাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। ‘আপ কি সহেলী’র মতো ‘কনভয় নাইট ফ্যালকন’ পরিকল্পনা সফল হলে অন্য জ়োনগুলিও তা অনুসরণ করতে পারে বলে মনে করছেন রেলের আধিকারিকদের একাংশ।