বাহানগা বাজারে দুর্ঘটনার তদন্ত প্রসঙ্গে কলকাতায় একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র।
বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর ১৯ দিন কেটে গিয়েছে। কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, কে বা কারা এর নেপথ্যে দায়ী, তার তদন্ত করছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। রেলের তরফেও পৃথক ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তার মাঝে বুধবার কলকাতায় এসে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
বুধবার কলকাতায় এসে হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রোর রুট পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী। তার পর পূর্ব রেল, দক্ষিণ-পূর্ব রেল এবং কলকাতা মেট্রোর সঙ্গে ফেয়ারলি প্লেসে বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা। আগামিকাল সকালে তিনি দিল্লিতে ফিরে যাবেন।
কলকাতায় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। নিজস্ব চিত্র।
করমণ্ডল দুর্ঘটনার তদন্ত কত দূর এগোল, রেলমন্ত্রীকে সেই প্রশ্ন করা হলে তিনি বিশেষ কিছু বলতে চাননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অশ্বিনী বলেন, ‘‘কমিশন অফ রেলওয়ে সেফ্টি-র তরফে পৃথক ভাবে করমণ্ডল দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে। রেল প্রযুক্তিগত তদন্ত চালাচ্ছে। এ ছাড়া, সিবিআই দুর্ঘটনার তদন্ত করছে। এই সব তদন্তের মাঝে এখনই এ নিয়ে আমার কিছু বলা উচিত হবে না।’’
তবে বাহানগা বাজার স্টেশনের পরিস্থিতি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হতে চলেছে, আশাবাদী রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বাহানগা বাজার স্টেশনে রেলের তরফে যা কাজ ছিল, অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে। ছোটখাটো কয়েকটি কাজ বাকি। আশা করা যায়, আর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সেগুলি শেষ হবে। তার পর বাহানগা আর পাঁচটি স্টেশনের মতো হয়ে যাবে।’’
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে রেলের স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা ব্যবস্থা কবচ কেন ব্যবহার করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে রেলমন্ত্রী জানান, সে দিনের দুর্ঘটনার সঙ্গে কবচের আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। সে দিন যে পয়েন্ট মেশিন সোজা করে রাখার কথা ছিল, সেটি লুপ লাইনের দিকে ঘুরিয়ে রাখা ছিল। তাই এই দুর্ঘটনা। এতে রাজনীতির রং না লাগানোর অনুরোধ করেছেন রেলমন্ত্রী। তবে একইসঙ্গে তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমি রাজনীতি টানতে চাই না। তবে যাঁরা রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে কবচের প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের আমিও প্রশ্ন করতে চাই। নব্বইয়ের দশকে সারা বিশ্বে যখন রেলে কবচের মতো স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, ভারতে তা ২০১৪ সালের আগে হল না কেন?’’
দুর্ঘটনার পর বালেশ্বরে ছুটে গিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী। দিন রাত এক করে তাঁকে উদ্ধারকাজের তদারকি করতে দেখা গিয়েছিল। রেল বোর্ড সিবিআই তদন্তের জন্য সুপারিশও করেছিল। বাহানগায় রেলমন্ত্রীর সামনে গিয়ে কবচ প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, মমতা নিজে দুই দফায় রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০১১ সালে রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা। ২০১৪-র আগে কবচের মতো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করা হয়নি কেন, সেই প্রশ্ন তুলে অশ্বিনী মমতাকে সে দিনের জবাব দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের প্রধান লক্ষ্য, করমণ্ডল দুর্ঘটনার সত্য প্রকাশ্যে আনা। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে চায় রেল। সেই কারণে তদন্তে সহায়তা প্রয়োজন। বালেশ্বরের দুর্ঘটনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনও গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন রেলমন্ত্রী।
কবচ প্রযুক্তি, বন্দে ভারতের মতো বিলাসবহুল ট্রেন চালুর মাঝে কি সাধারণ, দরিদ্র মানুষের কথা ভুলে যাচ্ছে রেল? সাধারণ কামরাগুলির সুরক্ষার জন্য তারা কোনও পদক্ষেপ করছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয় অশ্বিনীর কাছে। তিনি জানান, সাধারণ ট্রেনেও বিশেষ এলএইচবি কোচ বসানো হচ্ছে। বছরে প্রায় ৬০০০ এমন কোচ তৈরি করছে রেল। তাই সাধারণের নিরাপত্তার বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না— এ কথা ভাবা ঠিক হবে না, জানান রেলমন্ত্রী। করমণ্ডল দুর্ঘটনার পর রেলের ইন্টারলকিং সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে এই ধরনের প্রযুক্তি অত্যন্ত নিরাপদ, জানিয়েছেন তিনি।
গত ২ জুন চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস বালেশ্বরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। এই দুর্ঘটনায় ২৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা হাজারের বেশি। এখনও অনেক দেহ চিহ্নিত করা যায়নি। সে সম্পর্কে রেল বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে, জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।