BJP

‘ঘুণ ধরা’ বিজেপি-তে ভাল নেই সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই, মুখ খুললেন শিক্ষক দিবসে

কেমন আছেন বাংলার রাজনীতিতে ‘মাস্টারমশাই’ হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ? শিক্ষক দিবসে আনন্দবাজার অনলাইন খোঁজ নিতেই উগরে দিলেন ক্ষোভ।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৫০
Share:

শরীর ভাল থাকলেও মন ভাল নেই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের। ফাইল চিত্র

শরীর ভাল থাকলেও মন ভাল নেই। তবে ৯০ বছর বয়সের একটা চাপ তো রয়েইছে। যদিও সেই চাপ নয়, মনের টান নেই বলেই রাজনীতি থেকে দূরে সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বললেন, ‘‘বিজেপি-র কাজকর্মের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারছি না। ঘুণ ধরা সংগঠন। তা ছাড়া আমাকে বিশেষ সম্মান দিয়ে ডাকাও হয় না।’’

শিক্ষক দিবসে কেমন আছেন বাংলার রাজনীতিতে ‘মাস্টারমশাই’ হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথবাবু? খোঁজ নিতে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে ফোন করতেই ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। বললেন, ‘‘বিজেপি-র একটা অংশই চক্রান্ত করে আমায় সিঙ্গুর বিধানসভা আসনে হারিয়েছে।’’ এক সময়ের ছাত্র বেচারাম মান্নার কাছেই হারতে হয় মাস্টারমশাইকে। তবে সেই হারের পিছনে কোনও ‘চক্রান্ত’ ছিল এমন অভিযোগ এই প্রথম তুললেন তিনি।

Advertisement

সিঙ্গুর। তৃণমূলের উত্থানের সঙ্গে যে নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। যেমন ভাবে সিঙ্গুরের সঙ্গে জড়িয়ে ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথের নাম। তৃণমূলের সেই ‘রবি’ ভোটের মুখে মুখে উদিত হন গেরুয়া আকাশে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে প্রার্থী করে দেয় বিজেপি। তা নিয়ে ক্ষোভও তৈরি হয়েছিল গেরুয়া শিবিরের স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে। যা প্রকাশ্যেও এসে যায়। কিন্ত চক্রান্তও হয়েছিল? রবিবার রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে ভো‌টগ্রহণ ছিল ১০ এপ্রিল। আর তার দু‍'দিন আগে ৮ তারিখ স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি-সহ সাত জন মিলে তৃণমূলের প্রার্থীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন।’’

সিঙ্গুর মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৯৭ সালে অবসর নেন। এর পরে শুরু হয় মাস্টারমশাইয়ের রাজনৈতিক উত্থান। ২০০১ থেকে ২০১৬ টানা চারবার সিঙ্গুর থেকে বিধায়ক হয়েছেন। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রীও থেকেছেন। তবে ২০২১ সালের আগে কখনও রাজনৈতিক রং বদল করেননি। সিঙ্গুরে তাঁর সম্মানও বরাবর আলাদা ছিল। বিজেপি-তে যাওয়ার পরে সেই সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকবে না বলে তাঁর দলবদলের সময়ে মন্তব্য করেছিল তৃণমূল। কিছুটা যে হয়েছে তা যেন মাস্টারমশাইয়ের কথাতেই পরিষ্কার। বললেন, ‘‘বিজেপি-তে কাজ করার সুযোগটাই নেই। জেলা নেতৃত্বের তরফে সে ভাবে আহ্বানও নেই। একবার চুঁচুড়ায় একটা বৈঠকে ডেকেছিল, গিয়েছিলাম। আর ডাকেনি। এখন গ্রামে থেকে বা ঘরে বসে যেটুকু যা করা যায় তাই করি। তবে স্থানীয় কোনও কর্মসূচিও তো নেই।’’ কিন্তু তাঁর এতদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে কেন যেচে কাজকর্মে ঢুকছেন না? মাস্টারমশাই বললেন, ‘‘বিজেপি-তে আমায় শ্রদ্ধা করার মতো নেতা নেই। আমার আস্থা অর্জন করার মতো নেতাও নেই। আর বিজেপি-র অনেক নীতির সঙ্গে আমার মতের মিলও হচ্ছে না। কিছু কিছু ব্যাপারে প্রতিবাদও করেছি। কিন্তু কারও সঙ্গে বনছে না।’’

Advertisement

কেন গিয়েছিলেন বিজেপি-তে? মাস্টারমশাইয়ের জবাব, ‘‘বিজেপি-র নীতির সঙ্গে আমার কোনও কালেই আস্থা ছিল না। দল (তৃণমূল) যখন আমায় না বলে, কোনও ইঙ্গিত না দিয়ে বর্জন ক‌রল এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের গুরুত্ব দিল তখন প্রতিবাদ করেছিলাম। প্রার্থী বদলের পরে প্রতিবাদ জানানোর একটা মঞ্চ দরকার ছিল। তাই বিজেপি-তে আশ্রয় নিয়েছিলাম।’’

নতুন ‘আ‌শ্রয়’-এ মন না টিকলেও ছেড়ে আসা ‘আশ্রয়’-এ ফিরতেও চান না তিনি। বললেন, ‘‘ফেরার ইচ্ছা নেই। এখন তৃণমূল সরকারের অনেক কাজকেই আমি সমর্থন করি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement