rabindra sarobar

ছট শেষে সরোবরের জলে ভেসে উঠছে মরা কচ্ছপ-মাছ! ভোটের জন্য সবাই চুপ, বলছেন পরিবেশবিদরা

বাঁশ-লাঠি দিয়ে তছনছ করে দেওয়া হয় পদ্মবন। শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভাবেই চলেছে ছটপুজো। রবিবার ভোরেও একই ছবি ধরা পড়ে। পরিবেশবিদদের দাবি, যে ভাবে জলাশয়ে নেমে আচার-অনুষ্ঠান হয়েছে, জলে তেল-ঘি সহ পুজোর সামগ্রী মিশেছে, তাতে জলজ প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:১২
Share:

পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, ছটপুজোর নাম করে আসলে ‘ভোটপুজো’ হয়ে গেল ! নিজস্ব চিত্র

পরিবেশবিদদের আশঙ্কাই সত্যি হল। ছটপুজোর পরেই রবীন্দ্র সরোবরে ভেসে উঠল মরা মাছ। তছনছ হল সরোবরের পদ্মবন। একটি বড় মাপের কচ্ছপও ভেসে উঠেছে জাতীয় সরোবরের জলে।

Advertisement

আদালতের নির্দেশ উড়িয়ে যে ভাবে ছটপুজোর নামে ‘তাণ্ডব’ চলল, তাতে জীববৈচিত্রের উপর প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁদের অভিযোগ, ছটপুজোর নাম করে আসলে ‘ভোটপুজো’ হয়ে গেল! পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী নব দত্ত বলছেন, ‘‘ভোটের কথা মাথায় রেখে পরিবেশের বিষয়টি ভাবলই না কোনও রাজনৈতিক দল। সরকারে রয়েছে তৃণমূল। আদালতের নির্দেশ পালন করতে সরকার কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকাতেই রইল।’’

সোমবার সকালে রবীন্দ্র সরোবরের বিভিন্ন জায়গায় মাছ ভেসে উঠেছে। সরোবরের জলে ভেসে উঠেছে বড়সড় কচ্ছপও। পদ্মবন নষ্ট হয়েছে। শনিবার সকালে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তালা ভেঙে রবীন্দ্র সরোবরে ঢুকেছিলেন পুণ্যার্থীরা। তার পর সরোবরের জলে নেমে চলেছে আচার-অনুষ্ঠান। বাঁশ-লাঠি দিয়ে তছনছ করে দেওয়া হয় পদ্মবন। শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভাবেই চলেছে ছটপুজো। রবিবার ভোরেও একই ছবি ধরা পড়ে।

Advertisement

পরিবেশবিদদের দাবি, যে ভাবে জলাশয়ে নেমে আচার-অনুষ্ঠান হয়েছে, জলে তেল-ঘি সহ পুজোর সামগ্রী মিশেছে, তাতে জলজ প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। ছটপুজোর পর রবীন্দ্র সরোবরের জল কতটা দূষিত হয়েছে, তা পরীক্ষার জন্যে এ দিন নমুনা সংগ্রহ করেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পরীক্ষার পরেই স্পষ্ট হবে, জলজ প্রাণীর জন্য কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস রবীন্দ্র সরোবার।

দূষণের জেরে মাছ, কচ্ছপ ভেসে উঠছে। নিজস্ব চিত্র।

তালা ভেঙে পুণ্যার্থীদের রবীন্দ্র সরোবরে ঢোকার ঘটনায় সরব হয়েছিলেন পরিবেশবিদ সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রশাসনের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ বলেন সোমবার বলেন, “আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তালা ভেঙে ঢুকে গেল একদল যুবক? পুলিশ–প্রশাসন কোথায় ছিল? এখন দূষণের জেরে মাছ, কচ্ছপ ভেসে উঠছে। এর দায়িত্ব কে নেবে?”

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তও ছটের আড়ালে রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি এ দিন বলেন “আসলে ছটপুজো নয়, এটা ভোট পুজো হল। আগের থেকে রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ ভাল হয়েছে। কিন্তু এ বছর যা হল, তা মেনে নেওয়া যায় না। তথ্য ও ছবি-সহ বিষয়টি জাতীয় পরিবেশ আদালতে জানাচ্ছি। ছটপুজোর বিষয়টি রাজনীতির আঙিনায় পৌঁছে গেল।”

ছটের আড়ালে রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

নব দত্তও একই সুরে বলেন, “একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে গিয়ে জৈববৈচিত্রের পরিবর্তন ঘটে গেল। জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। আদালতের আদেশ কার্যকর করতে গত ২০ সেপ্টেম্বর বৈঠক হয়। সেখানে বিহারি সমাজের প্রতিনিধি, স্থানীয় ক্লাব, পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা এবং পরিবেশ কর্মীরাও ছিলেন। নানা পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আসল সময়ই পুলিশ-প্রশাসন উধাও। বিষয়টি পুজোতে আর আটকে নেই। রাজনীতির বিষয় হয়ে গিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “শুধু ফুল, প্লাস্টিক তুলে হবে না, ওই জলে তেল-ঘি মিশে গিয়ে জলের বৈচিত্রই পাল্টে গিয়েছে। এর খেসারত দিতেই হবে। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেছিলেন, আমি কি লাঠি গুলি চালাব? ফলে ইঙ্গিত তো ছিলই!”

আরও পড়ুন: পুণ্যার্থী কম, তাই দ্রুত সাফ বিকল্প জলাশয়

আরও পড়ুন: সরোবরের জলের মান নামল কোথায়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement