আর জিকর কাণ্ডের প্রতিবাদ। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন এবং ধর্ষণের মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারক ঘটনার দিন টালা থানার এক অফিসারের জেনারেল ডায়েরি (জিডি) লেখার ক্ষেত্রে অনিয়মের কথা তুলে ধরেছিলেন। জানা গিয়েছিল, সকালের জিডি রাতে করেছেন ওই পুলিশ অফিসার। এর জন্য জিডি-তে ফাঁকা জায়গা রাখা ছিল। এ বার কলকাতা পুলিশের প্রত্যেক অফিসারকে ঠিক সময়ে, অর্থাৎ ‘রিয়েল টাইম’-এ জিডি করার নির্দেশ দিল লালবাজার। সূত্রের খবর, মৌখিক নির্দেশে বলা হয়েছে, যে সময়ে যা ঘটছে, সেই সময়েই তার জিডি করতে হবে। যাতে তদন্তের সঙ্গে মিল থাকে ওই জিডি-র। আবার প্রতিটি থানায় রয়েছে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। ফলে, কোনও অফিসারের থানা থেকে কোথাও বেরিয়ে যাওয়া কিংবা ফিরে আসা, এই সব কিছুরই প্রকৃত সময় মেনে জিডি করতে বলা হয়েছে। যাতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সঙ্গে তার মিল থাকে।
এক পুলিশকর্তা জানান, ওই নির্দেশে কোথাও টালা থানা এলাকার সেই ঘটনার কথা বলা হয়নি। লালবাজারের একাংশ জানিয়েছেন, পুলিশকর্মীদের একটি অংশের মধ্যে ঠিক সময় মেনে জিডি না লেখার প্রবণতা রয়েছে। জিডি বুক ফাঁকা রেখে পরে সময় মতো তা পূরণ করার অভিযোগ রয়েছে থানার পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে। এই প্রবণতা বন্ধ করতেই এমন নির্দেশ জারি করা হয়েছে পুলিশকর্তাদের তরফে।
আর জি করে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে পুলিশের বেশ কিছু অনিয়ম সামনে এসেছিল। তার মধ্যে সময় মতো জিডি না লেখা একটি উদাহরণ মাত্র। মনে করা হচ্ছে, এমন গাফিলতি যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, তার জন্যই কলকাতার নগরপালের মাসিক অপরাধ দমন বৈঠকে এ বিষয়ে থানার অফিসারদের সতর্ক করে প্রকৃত সময়ে জিডি করতে বলা হয়েছে পুলিশকর্তাদের তরফে।
আর জি কর মামলায় বিচারক তাঁর রায়ে জানিয়েছেন, সকালের এই ঘটনায় রাতে থানায় ফিরে সাড়ে ১১টা নাগাদ জিডি লেখেন এক অফিসার। রাত সাড়ে ১১টায় তা লেখা হলেও জিডি নম্বর ছিল সকালের। অর্থাৎ, ওই অফিসারের জিডি লেখার জন্য জিডি বুকে জায়গা ফাঁকা রেখেছিলেন অন্য পুলিশকর্মীরা। বিভিন্ন থানা সূত্রের খবর, এই প্রবণতা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এ ভাবে জিডি লিখে আসছেন কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানার পুলিশ অফিসারেরা।
লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিস্টেমস’ বা সিসিটিএনএস চালু হয়ে যাওয়ায় তাতে অপরাধের বিবরণ থেকে শুরু করে এফআইআর, চার্জশিট, এমনকি, অপরাধীর বিস্তারিত তথ্য আপলোড করতে হয়। ইতিমধ্যে থানাগুলিকে সিসিটিএনএসে সব জিডি-ও আপলোড করতে বলা হয়েছে। এর ফলে জিডি লেখায় কোনও রকম অনিয়ম চাইলেও করতে পারবেন না পুলিশ অফিসারেরা। তবে কলকাতা পুলিশের সব থানায় সিসিটিএনএসে জিডি আপলোড করার পদ্ধতি চালু হয়নি বলে সূত্রের দাবি।