—প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের প্রায় সমস্ত জেলায় শুক্রবার থেকে বজ্রপাতের সতর্কতা ঘোষণা করেছে আবহাওয়া দফতর। যা আশঙ্কা বাড়াচ্ছে, তবে কি বজ্রাঘাতে মৃত্যুর তালিকা আরও দীর্ঘ হবে?
এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। কারণ, প্রতি বছর লাফিয়ে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা। ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে রেকর্ড তৈরি করে এই বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ। চলতি মাসেই রাজ্যে বজ্রপাতে অন্তত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বাদ যায়নি কলকাতাও।
যদিও প্রশাসনিক স্তর থেকে পদক্ষেপ বলতে, ফাঁকা জায়গায় না থাকার প্রচার করেই কাজ সারা হচ্ছে। অন্য দিকে, ফাঁকা জায়গা এড়ানোর পাশাপাশি একাধিক সতর্কতামূলক পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিস বলছে, নির্ধারিত ১১ জুনের পরিবর্তে কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে বর্ষা শুরু হয়েছে ১৯ জুন। তবে রাজ্যের সর্বত্র এখনও বর্ষা শুরু হয়নি। তাপপ্রবাহ বন্ধ হলেও গরম সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে পারেনি পশ্চিমের একাধিক জেলা।
এ দিন থেকেই সব ক’টি জেলায় মৌসুমী বায়ু ঢুকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গে। ফলে আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গের কোনও না কোনও জেলায় বজ্রপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের দুই দিনাজপুর এবং মালদহে সেই আশঙ্কা রয়েছে।
রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রের খবর, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয় এমন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বছর তিনেক আগে যৌথ পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে বসানো হয়েছিল ‘লাইটনিং সেন্সর’। উদ্দেশ্য ছিল, বজ্রপাতের আগাম পূর্বাভাস পাওয়া। তবে ওই সংস্থার প্রধান কার্যালয় আমেরিকায় হওয়ায় যোগাযোগে অসুবিধা হচ্ছিল। কখনও কখনও বজ্রপাতের খবর আসছিল মাত্র ১০ মিনিট আগে। ফলে নতুন করে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। আপাতত ফাঁকা জায়গা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন দফতরের আধিকারিকেরা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস যদিও বললেন, ‘‘কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে ঠিকই, তবে অন্য যে কোনও জেলার তুলনায় কলকাতায় বজ্রাঘাতে মৃতের সংখ্যা কম। যার কারণ, এখানে ফাঁকা জায়গা কম। মূল কথা হল, বজ্রগর্ভ মেঘের সঙ্গে বৃষ্টিপাত যখন হবে, তখন যে কোনও উপায়ে ফাঁকা জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে।’’ তাঁর পরামর্শ, ওই সময়ে ধাতব জিনিসের ব্যবহার এড়াতে হবে। বেসিনের কলের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওই সময়ে কাঠের খাটে শোয়া উচিত, যে হেতু কাঠ বিদ্যুতের কুপরিবাহী। গাছের নীচে বা কোনও উঁচু বাড়ির আশপাশে থাকা যাবে না।
অধিকর্তা বলেন, ‘‘চাষবাস বা অন্য কোনও কাজে ফাঁকা জায়গায় যাঁরা থাকেন, ওই সময়ে তাঁদের বিপদ বেশি। দ্রুত কোনও পাকা ছাউনির নীচে প্রবেশ করতে পারলে ভাল, নয়তো হাঁটু মুড়ে বসতে হবে। যাতে আশপাশের কোনও কিছুর থেকেই ওই ব্যক্তির উচ্চতা বেশি না হয়। শুয়ে পড়লে চলবে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বজ্রাঘাতে আহতকে ছুঁলেই বিপদ ঘটবে, এমনটা নয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার থেকে এটা একেবারেই আলাদা। তাই আহতকে ফেলে না রেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। সকলে সতর্ক হলেই বজ্রাঘাতে মৃত্যু কমানো সম্ভব।’’