ফিরিয়ে দে না হাল...। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায়। — বিশ্বনাথ বণিক
বড়জোর ঘণ্টা দুয়েকের ফারাক। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটেতেও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে যোগাযোগ ভবনের চেহারাটা অন্য রকম ছিল। মিছিল ফেরত জনতার চাপ হাল্কা হতে সন্ধ্যা সওয়া ছ’টা নাগাদ বাড়ি ফিরবেন বলে অফিস থেকে নেমে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী আশিস সরকার যা দেখলেন, তাতে তিনি একেবারে তাজ্জব।
সকাল দশটা থেকে গোটা এলাকার দখল নেওয়া বাসগুলি ঘিরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ওই অংশ পিকনিক স্পটের চেহারা নিয়েছিল। গ্যাস বা স্টোভ জ্বেলে কোথাও তৈরি হয়েছে উন্মুক্ত পাকশাল। বড় বড় ডেকচি থেকে মাংসের সুঘ্রাণ ভেসে যাচ্ছে। দুপুরের পরে গাদাগুচ্ছের এঁটো কাগজের প্লেট, প্লাস্টিকের গেলাস, খিচুড়ি, ভাত-তরকারির ভুক্তাবশেষ বা মাংসের হাড় পড়ে থাকা রাস্তায় পা রাখাই দায় হয়ে ওঠে। যেমনটি বরাবরই ঘটে থাকে, একুশে জুলাই ধর্মতলার সমাবেশের পরে। কিন্তু এ দিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার আগে আশিসবাবু দেখলেন, কোনও ম্যাজিকে গোটা রাস্তা নিমেষে তকতকে-ঝকঝকে হয়ে উঠেছে।
কিলোমিটার তিনেক দূরে ফোর্ট উইলিয়ম চত্বরের ছবিটাও তখন একই রকম। নবান্ন থেকে ফেরার পথে শহরে ঢুকে ক’জন নিত্যযাত্রী দেখলেন, রাজপথ বা ময়দান-চত্বর অন্য দিনের থেকেও পরিষ্কার। জঞ্জাল সাফাইয়ের কয়েকটি গাড়ি নিমেষের মধ্যে সব এঁটো থালা-গেলাস, হাড়-কাঁটার স্তূপ যেন চাঁছিপুঁছি করে গিলে মুহূর্তে পেটের মধ্যে চালান করে ফেলছে।
কলকাতা পুরসভার সৌজন্যে কার্যত অবিশ্বাস্য এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল মহানগর। একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে এ বার যেমন ভিড় হয়েছে, তেমনই চোখে পড়েছে জঞ্জাল সাফাই অপারেশনের তীব্রতা। পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার রাতে বলছিলেন, ‘‘বিকেলের মধ্যেই প্রায় ২০০ মেট্রিক টন জঞ্জাল সাফ করা হয়ে গিয়েছিল। রাত পর্যন্ত আমাদের কাজ চলেছে। ধর্মতলা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ময়দান চত্বর— সর্বত্রই দারুণ কাজ হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সামান্য কিছু কাজ যদি বাকি থাকে, কাল (শুক্রবার) সকালের মধ্যে সেটাও সেরে ফেলা হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, এ বার বেশ কয়েক দিন আগেই ঠিক করা হয়, দিনের দিন তৃণমূলের শহিদ দিবসের সমাবেশের জঞ্জাল সাফ করে ফেলা হবে। সেই মতো সকাল থেকেই ১০০ জন পুরকর্মীকে কাজে লাগানো হয়। রাস্তাঘাট নোংরা হতে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন তাঁরা। ডাবের খোলা, ভুট্টার খোসা পরিষ্কারের কাজ চলছিল। তবে মূল অপারেশনের শুরু হয় বিকেলের দিকে। সভা শেষে জনতা বাড়িমুখী হতে না-হতেই শাসক দলের আরও ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী পুরকর্মীদের সঙ্গে মাঠে নামেন। ময়লা তোলার ঠেলাগাড়ি, লরি, পেলোডার, জলের গাড়ি থেকে শুরু করে জঞ্জাল সাফাইয়ের একেলে সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি কাজে লাগানো হয়। চারটি যন্ত্রচালিত ঝাড়ু ( মেক্যানিকাল সুইপার) রাস্তা ঝাঁট দিতে শুরু করে। চারটে ‘মোবাইল কমপ্যাক্টর’ও কাজ করতে থাকে। প্রযুক্তির সাহায্যে, জঞ্জালের ভিতরের জল শুষে নিয়ে তা সব আবর্জনা নিজের পেটে ঢুকিয়ে ফেলে। এতে দুর্গন্ধ কম হয়। ধাপার মাঠে জঞ্জাল ফেলার আগে পুরসভার বিভিন্ন ময়লা ফেলার স্টেশনে এই ভাবে জল শুষে নিয়েই জঞ্জাল রাখা হয়। এ দিন বাড়তি জঞ্জালের বোঝা খালাস করতে কালবিলম্ব করা হয়নি, জঞ্জাল তুলে গাড়িগুলি সটান ধাপার মাঠে গিয়ে জঞ্জালমুক্ত হয়।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে চাঁদনি চক স্টেশনের কাছের জনৈক দোকানদার পুরকর্মী ও শাসক দলের স্বেচ্ছাসেবীদের এই যৌথ চেষ্টায় চমৎকৃত। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য যে কোনও দিনের থেকে দেখি তাড়াতাড়ি, ঢের ভাল ভাবে আজ শহর পরিষ্কার হয়েছে।’’