বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেল গেট। তবু তার মধ্যেই লেভেল ক্রসিংয়ে ঢুকে পড়েছে গাড়ি, রিকশা। সোমবার, ঢাকুরিয়ায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
দৃশ্য ১: হুটার বাজছে। লেভেল ক্রসিংয়ের বুম নামাও শুরু হয়ে গিয়েছে। তারই মধ্যে ঝড়ের গতিতে একটি ফাঁকা টাটা সুমো ঢুকে পড়ল লেভেল ক্রসিং চত্বরে। গাড়িটির গতি এতটাই যে, রেল গেটের বুমের সঙ্গে প্রায় ধাক্কা লাগার উপক্রম। অথচ, চালক ভাবলেশহীন।
দৃশ্য ২: লেভেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ। বাজছে হুটার। সেই গেটের নীচ দিয়ে সাইকেল নিয়ে প্রায় হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে লেভেল ক্রসিং টপকে গেলেন জনৈক আরোহী।
উপরের দু’টি ঘটনার প্রথমটি ঢাকুরিয়া স্টেশন এলাকার, দ্বিতীয়টি পার্ক সার্কাসের। রবিবার খড়দহে লেভেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ হওয়ার মুখে লাইনে চলে আসা একটি টাটা সুমোয় ডাউন হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসের ধাক্কার পরে এমন ছবি ধরা পড়ল সোমবার দুপুরে। যেখানে হুটার বাজার পরে কিংবা গেট বন্ধ হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে বেপরোয়া ও নিরুত্তাপ ভাবে লেভেল ক্রসিং পারাপার করতে দেখা গেল পথচারীদের।
খড়দহ স্টেশনের রেলগেটে রবিবার রাতের ওই ঘটনার ফুটেজ দেখে আঁতকে উঠেছেন অনেকেই। কিন্তু কলকাতার মধ্যে ও আশপাশে যেখানে যাতায়াতের জন্য লেভেল ক্রসিং পেরোতে হয়, তেমন কয়েকটি জায়গা এ দিন ঘুরে মনে হল না, ওই ঘটনার পরে কারও সচেতনতা এতটুকু বেড়েছে। হুটার বাজছে হুটারের মতো, লেভেল ক্রসিংয়ের গেট নামতে শুরু করেছে। তারই মধ্যে দেখা গেল, গেটম্যানের ঘরের দিকে তাকিয়ে মোটরবাইক আরোহী যুবক গেট নামাতে বারণ করছেন, কোথাও আবার গেট বন্ধ হওয়ার পরে লেভেল ক্রসিং চত্বরে ঢুকে বাইকচালক সঙ্কীর্ণ একফালি রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
শহর ও শহরতলির লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যানেরা জানাচ্ছেন, নিত্যদিন এ সব ঘটনায় তাঁরা অভ্যস্ত। এক গেটম্যানের কথায়, ‘‘লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে রেললাইন। গাড়িচালক ও পথচারীরা বেপরোয়া। তাঁদের নিরাপদ পারাপারের উপরে নজর রেখে গেট বন্ধ করতে হয়। তাতে অনেক ক্ষেত্রে ট্রেনকে সবুজ সিগন্যাল দিতে সময় লাগে। কিছু বলতে গেলে লোকজন আমাদের ধমক দেন। কখনও টোটো, কখনও ছোট মালবাহী লরি গেট নামার আগের মুহূর্তে ঢুকে তীব্র গতিতে লেভেল ক্রসিং পেরোতে চায়। তার জেরে গেটে ধাক্কা মারে। দোষ হয় গেটম্যানের।’’
এমন ঘটনার কথা শোনা গেল ঢাকুরিয়া, গোবরা, পার্ক সার্কাস, বালিগঞ্জ, যাদবপুরের মতো বিভিন্ন স্টেশন এলাকায় ঘুরে। পার্ক সার্কাস স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিংয়ের গেট নামার পরেও তার তলা দিয়ে গলে গেলেন এক সাইকেল আরোহী। তা নিয়ে প্রশ্ন করায় তাঁর উত্তর, ‘‘আমি নজর রেখেছি ট্রেনের উপরে।’’ আবার, ঢাকুরিয়া স্টেশনের কাছে গেট বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে তীব্র গতিতে টাটা সুমো চালিয়ে বেরিয়ে যাওয়া চালক ক্যামেরা দেখে শুধু বললেন, ‘‘খুব তাড়া আছে। তাই এ ভাবে এলাম।’’ স্থানীয়েরা জানান, সকাল কিংবা বিকেলের ব্যস্ত সময়ে লেভেল ক্রসিং চত্বরে টোটো, গাড়ির আটকে পড়া নতুন কিছু নয়। তাদের লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার পরেই গেটম্যান গেট নামাতে বাধ্য হন।
পূর্ব রেল এ দিনও জানিয়েছে, লেভেল ক্রসিং চত্বরে ট্রেনের সামনে পড়ে দুর্ঘটনা এড়াতে তাদের তরফে প্রচার চালানো হয়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানান, মানুষকে আরও সচেতন করতে তাঁরা লিফলেট বিলি করছেন। তবে, এখনই ওই ভাবে পারাপারের জন্য জরিমানা নেওয়া কিংবা কঠোর পদক্ষেপ করার পক্ষপাতী নন তাঁরা।