বিতর্কিত দোকান। —নিজস্ব চিত্র।
পুরনো টিন, পুরনো বাঁশ দিয়ে সরকারি জায়গার উপরে তৈরি করা হয়েছে দোকান। যাতে দেখলে মনে হয় পুরনো দোকান। সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার নির্দেশিকা জারি হওয়ার অনেক আগেই তা তৈরি হয়ে আছে। ভাঙার তোড়জোড় শুরু হলেও লোকজন দাবি করছেন, দোকান পুরনো। তা হলে উচ্ছেদ করলে পুনর্বাসন দিতে হবে। নতুন ও পুরনো দোকান নিয়ে এমনই কানামাছি চলছে নিউ টাউনে। তার জেরে উচ্ছেদ করতে গিয়ে কোথাও কোথাও প্রবল বাধার মুখে পড়ছে নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)। এমনকি উচ্ছেদ ঠেকাতে আধিকারিকদের উপরে রাজনৈতিক চাপও তৈরি করা হচ্ছে বলে খবর।
এনকেডিএ সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে নিউ টাউনের সিটি সেন্টার-২ এর পিছনে ৭৪টি এমন দোকান উচ্ছেদের পরিকল্পনা করেও তা বাস্তবায়িত করতে পিছু হটতে হচ্ছে। এমনকি ওই দোকানগুলিকে ছাড় দিয়েই নিউ টাউনের অন্যত্র উচ্ছেদ অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও খবর। এলাকার খবর, ওই তল্লাটের এক দাপুটে নেতা ফুটপাত দখল করে গজিয়ে ওঠা ওই সব দোকান উচ্ছেদে বাধা দিচ্ছেন। জানা যাচ্ছে, নিউ টাউনের কিছু কিছু জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান কার্যকর না করতে সম্প্রতি এনকেডিএ-র আধিকারিকদের একাংশের উপরে প্রবল চাপ এসেছে। তার মধ্যে রয়েছে সিটি সেন্টার-২ এর পিছনের দোকানগুলি।
এক দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ফুটপাতের উপরে হোটেল, গ্যারাজ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। খবর নিয়ে জানা গেল, ৭৪টি দোকানের মধ্যে অল্প সংখ্যক দোকান চালু রয়েছে। অধিকাংশ দোকানই বন্ধ পড়ে থাকতে দেখা গেল। ওই সব দোকানের অনেকগুলি পুরনো কালচে টিন দিয়ে তৈরি। এনকেডিএ-র এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কোন দোকান পুরনো, কোনটি নতুন, তার হিসাব এনকেডিএ-র কাছে রয়েছে। পুরনো কালো টিন দিয়ে দোকান তৈরি করে রাস্তা দখল করা হয়েছে। নোটিস পাঠালে বলা হচ্ছে পুরনো দোকান। অথচ সেই সব দোকান বন্ধ।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘একটি দোকান কত দিন, কত মাস বন্ধ থাকতে পারে?’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, সরকারি ফুটপাত দখলমুক্ত
করতে হবে। রাজ্য জুড়েই তার পর থেকে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার কাজ চালাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু নিউ টাউনে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করতে অনেক ক্ষেত্রেই নতুন দোকানদারেরা নিজেদের পুরনো বলে চালানোর চেষ্টা করছেন। দিন কয়েক আগে এক রাতে টিসিএস-এর কাছে এনকেডিএ-র আধিকারিকদের সঙ্গে হকারদের একাংশের রীতিমতো ধাক্কাধাক্কিও শুরু হয়। উচ্ছেদ ঠেকাতে হকারেরা সে দিন রাস্তাও অবরোধ করেন। প্রশাসনের দাবি, পুরনো হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে চাইছেন নতুন দোকানদারেরা।
এনকেডিএ কর্তৃপক্ষ অবশ্য কোনও চাপের কথা মানতে চাননি। সংস্থার সিইও প্রশান্ত বরাই বলেন, ‘‘সব জায়গায় অভিযান চলছে। উচ্ছেদের আগে কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে হয়। সেই মতো পুরনো ও নতুন বাছাই করেই এগোনো হচ্ছে। সরকারি জায়গা থেকে বেআইনি দখলদার সরানোর নির্দেশ রয়েছে প্রশাসনের কাছে। সেই নির্দেশ পালন করা হবে।’’