—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সদ্য ৪০ বছর পূর্ণ করা চক্ররেল কি ট্রামের মতোই রুগ্ণ পরিবহণ-মাধ্যমে পরিণত হয়ে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাবে? ঘন ঘন ওই ট্রেনের পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশে এমনটাই আশঙ্কা করছেন রেলকর্তাদের একাংশ। গঙ্গায় তর্পণ, প্রতিমা বিসর্জন, কোনও বড় জমায়েত হলেই রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে চক্ররেলের পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয় বলে অভিযোগ। রেলকর্তাদের একাংশের দাবি, এ হেন নির্দেশে চক্ররেল কার্যত টয় ট্রেনের মতো আনন্দ সফরে (জয়রাইড) পরিণত হচ্ছে। পরিষেবা অনিয়মিত হতে থাকলে ওই ট্রেনের পরিষেবার গুরুত্ব থাকবে না বলেও আশঙ্কা অনেকের। উল্লেখ্য, সোমবারই রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের মহালয়া থেকে কালীপুজো পর্যন্ত নানা পর্বে ১১ দিন গঙ্গা তীরবর্তী অংশে চক্ররেলের পরিষেবা বন্ধ থাকবে। আজ, বুধবার ছাড়াও পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ অক্টোবর এবং ১-৪ নভেম্বর।
প্রসঙ্গত, মাঝেরহাট থেকে খিদিরপুর, প্রিন্সেপ ঘাট হয়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রীর শিয়ালদহ উত্তর এবং মেন শাখায় পৌঁছনোর গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এই ট্রেন সংযোগ। রেলকর্তাদের দাবি, চক্ররেলের ২১টি স্টেশনের মধ্যে ১৩টি স্টেশন একটি লুপের আওতায় রয়েছে। মাঝেরহাট থেকে প্রিন্সেপ ঘাট, ইডেন গার্ডেন্স, বি বা দী বাগ, বাগবাজার হয়ে কলকাতা স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত রেলপথকে ওই লুপ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। অতীতে ওই পথে দুর্গাপুজোর মতো ব্যতিক্রমী কিছু ক্ষেত্রে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য এক থেকে দু’দিন কয়েক ঘণ্টা পরিষেবা বন্ধ থাকত। এখন বছরভর প্রতিমা বিসর্জন ছাড়াও গঙ্গার ধারে বড় সমাবেশ ঘটলেই পরিষেবা স্থগিত করতে হয় বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি চক্ররেলের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে প্রিন্সেপ ঘাটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ নিয়ে হতাশা গোপন করেননি পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিলিন্দ দেউস্কর। যে রেলপথ খিদিরপুর, দ্বিতীয় হুগলি সেতু, ম্যান ও ওয়ার জেটি, মল্লিকঘাট ফুলবাজার, হাওড়া সেতু, বড়বাজার-সহ নদীমাতৃক কলকাতার নানা রঙের ক্যানভাসকে সুতোর মতো গেঁথে রাখে, তাকে এ ভাবে কথায় কথায় বন্ধ রাখলে গুরুত্ব কমে যেতে বাধ্য। সেই আক্ষেপের কথাই উঠে এসেছে জিএমের বক্তৃতায়।
রেলের তথ্য বলছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চক্ররেলের দৈনিক যাত্রী সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এখন ওই পথে ২৭টি ট্রেনে দৈনিক ৬৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। অফিসপাড়ার বহু যাত্রী ছাড়াও মাঝেরহাট, খিদিরপুর শাখার
যাত্রীদের কাছে চক্ররেলের গুরুত্ব অপরিসীম। ইডেন গার্ডেন্সে খেলার সময়েও চক্ররেলের উপর যাত্রীদের নির্ভরতা বাড়ে।
পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের বড় অংশের মতে, গঙ্গার ফেরি পরিষেবা, চক্ররেল এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মধ্যে উপযুক্ত সমন্বয় তৈরি করতে পারলে কলকাতার মূল ব্যবসায়িক এলাকায় পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ট্রামও অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। অফিসপাড়ায় গণপরিবহণ উন্নত হলে দ্রুত লোকজনের ভিড় কমানো সম্ভব হবে। যা অনেকাংশে যানজট হ্রাস করবে।
রেলকর্তাদের একাংশ সে দিকে তাকিয়েই চক্ররেলে লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষপাতী। তাঁরা বলছেন, চক্ররেলের পরিষেবা বন্ধ রাখলে বিস্তীর্ণ এলাকা পরিষেবার আওতার বাইরে চলে যায়। যদিও পুলিশ, পরিবহণ দফতর এবং প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের দাবি, গঙ্গার ধারে বিভিন্ন সময়ে আগত ভিড়ের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই ব্যবস্থা পুরোপুরি সাময়িক।