ঘটনার দিন আর জি করের সেমিনার রুমে প্রসূন। ছবি: সংগৃহীত।
হাজিরা খাতায় সই রয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্মী সশরীরে উপস্থিত অন্যত্র। আর জি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাজিরা খাতার ছবি (আনন্দবাজার পত্রিকা সত্যতা যাচাই করেনি) ভাইরাল হতেই, এমন অভিযোগ সামনে এসেছে। তাতে প্রশ্ন উঠেছে, ন্যাশনাল মেডিক্যালের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে কর্মরত প্রসূন চট্টোপাধ্যায় কী ভাবে হাজিরা খাতায় সই করেও, ঘটনার দিনে উপস্থিত ছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে? পর পর দু’দিনের ছবি এখন ঘুরছে সমাজমাধ্যমে।
যদিও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, প্রতিদিনই হাজিরা খাতায় সই করে আর জি করে চলে যেতেন ওই কর্মী। আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের অতি ঘনিষ্ঠ হওয়ায় প্রসূনকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করারও কারও সাহস ছিল না। এক হাসপাতালের কর্মী হয়েও কী ভাবে অন্য হাসপাতালে গিয়ে সারা দিন কাটাতে পারেন? রাজ্যের চিকিৎসক মহলের দাবি, এখানেও সেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশেষ ক্ষমতাবান গোষ্ঠী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র জোরেই সন্দীপ তাঁর অতি ঘনিষ্ঠ প্রসূনকে নিজের কাছে এনে দিনের পর দিন বসিয়ে রাখতেন।
সূত্রের খবর, সন্দীপ যখন ন্যাশনাল মেডিক্যালের সুপার তথা উপাধ্যক্ষ পদে ছিলেন, তখন থেকেই প্রসূনের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা। পরবর্তী সময়ে ‘স্যর’ (সন্দীপ) আর জি করের অধ্যক্ষ পদে বদলি হলেও পিছু ছাড়েননি প্রসূন। প্রতিদিন ন্যাশনাল মেডিক্যালের হাজিরা খাতায় সই করে পৌঁছে যেতেন আর জি করে। পরের দিন সকালে ন্যাশনালে গিয়ে আগের দিনের ‘ডিপারচার’ (প্রস্থান) এবং সেই দিনের ‘অ্যারাইভাল’ (আগমন) কলমে সই করতেন!
আর জি করের ঘটনার পরে সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা গিয়েছিল, ৯ অগস্ট সেমিনার রুমে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রসূন। যদিও ন্যাশনাল মেডিক্যালের হাজিরা খাতা বলছে, সে দিন প্রসূন তাঁর কর্মস্থলে উপস্থিত! একই অবস্থা ১২ অগস্টেও। ওই দিন সকালে সন্দীপ যখন পদত্যাগের কথা আর জি করের প্ল্যাটিনাম জুবিলি ভবনের সামনে সংবাদমাধ্যমকে জানাচ্ছেন, সেখানেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ওই কর্মীকে। তবে ২৭ অগস্ট অফিসে ‘আগমন’-এ সই থাকলেও, তার পরে আর কোনও কিছু নেই। সেমিনার রুমের সামনে ভিড়ে প্রসূন-সহ অন্যদের থাকার ভিডিয়ো ওই দিনই প্রকাশ্যে এসেছিল।
কী ভাবে এক জায়গায় কাজে হাজির রয়েছেন বলে সই করার পরে অন্যত্র থাকতে পারেন কোনও কর্মী? এ বিষয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যালের সুপার অর্ঘ্য মৈত্রকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরলেও, সংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের পরিচয় জানার পরে ফোন কেটে দেন। তাঁকে মেসেজ করা হলেও তিনি উত্তর দেননি। অন্য দিকে, এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ন্যাশনাল মেডিক্যালের আন্দোলনরত আবাসিক চিকিৎসকেরা। এমনকি, ২৭ অগস্টের পর থেকে প্রসূনেরও খোঁজ নেই। তিনি নিখোঁজ বলে পোস্টার পড়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যালে।
অন্য দিকে, আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সেখানে আন্দোলনকারী আবাসিক চিকিৎসকেরা। শুক্রবার তাঁদের তরফে কিঞ্জল নন্দ জানান, কলকাতার নগরপালের পদত্যাগের দাবিতে ২ সেপ্টেম্বর লালবাজার অভিযান করবে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট।