Dum Dum Sangeet Mela 2024

স্কুলের মাঠেই কেন সঙ্গীত মেলা, প্রশ্ন অভিভাবকদের 

সোমবার স্কুলের ওই মাঠে গিয়ে দেখা গেল, মেলার মঞ্চ-সহ মণ্ডপ খোলার কাজ চলছে। তবে, এ দিনও স্কুলের মাঠটির প্রায় পুরোটাই দখল করে রেখেছিল মেলার মণ্ডপ।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৭
Share:

অগোছালো: দমদমের সেন্ট মেরিজ় স্কুলের মাঠে সঙ্গীত মেলা হওয়ার পরের অবস্থা। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে আইসিএসই বোর্ডের প্রি-বোর্ড টেস্ট। স্কুল খুলে যাওয়ায় স্বাভাবিক পঠনপাঠনও চলছে। সেই সঙ্গে দমদমের সেন্ট মেরিজ় স্কুলের মাঠে আয়োজিত হয়েছে দমদম সঙ্গীত মেলা! ওই স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের ছেলেরা স্কুলে গেলেও মেলার কারণে খেলাধুলো করার উপায় থাকছে না। রবিবারই ছিল ওই মেলার শেষ দিন। কিন্তু অভিভাবকদের অভিযোগ, ৩ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই স্কুলের মাঠে মেলা চলায় বর্তমানে মাঠটির কার্যত তছনছ অবস্থা। মেলার আয়োজকদের তরফে মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়া হলেও অভিভাবকদের দাবি, পড়ুয়াদের খেলাধুলো করার যোগ্য হতে ওই মাঠের এখনও অনেকটা সময় লাগবে। তাই তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, দমদম এলাকায় আরও অনেক মাঠ থাকা সত্ত্বেও কেন সেন্ট মেরিজ় স্কুলের মাঠেই প্রতি বছর এ ভাবে সঙ্গীত মেলার আয়োজন করা হয়? কেন কিছু দিনের জন্য হলেও স্কুলের মাঠে খেলাধুলো করা থেকে বঞ্চিত হবে পড়ুয়ারা?

Advertisement

সোমবার স্কুলের ওই মাঠে গিয়ে দেখা গেল, মেলার মঞ্চ-সহ মণ্ডপ খোলার কাজ চলছে। তবে, এ দিনও স্কুলের মাঠটির প্রায় পুরোটাই দখল করে রেখেছিল মেলার মণ্ডপ। মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল মেলার জিনিসপত্র, পেরেকের টুকরো, মণ্ডপ ও স্টল খোলার ছোটখাটো জিনিস ও আবর্জনা। স্কুলের দু’টি মাঠের বড়টিতে তৈরি হয়েছিল মঞ্চ এবং মণ্ডপ। আর ছোট মাঠে তৈরি হয়েছিল শৌচালয়। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, বড় মাঠটি আপাতত খেলার অযোগ্য হয়ে রয়েছে। আর শৌচালয় তৈরি হওয়ায় ছোট মাঠের অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, সেখানে টিফিন খেতে যাওয়ারও উপায় নেই পড়ুয়াদের।

এ দিন স্কুলের মাঠের পাশ দিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে এক খুদে পড়ুয়ার অভিভাবক বললেন, ‘‘মণ্ডপ খুলে দিলেও এখনও অনেক দিন সাবধানে থাকার কথা ছেলেকে বলতে হবে। কারণ, মাঠে অনেক পেরেক পড়ে আছে।’’ পাশে হাঁটতে থাকা আর এক অভিভাবক বললেন, ‘‘স্কুলের গেটের সামনে বিদ্যুতের সুইচ বোর্ড পড়ে ছিল। অভিযোগ জানানোর পরে তা সরানো হয়েছে।’’ আরও এক অভিভাবক আবার মাঠে উপচে পড়া আবর্জনা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। এ বার বোর্ডের টেস্ট দেওয়া এক পড়ুয়ার অভিভাবক সাফ বললেন, ‘‘ছেলের বোর্ডের টেস্ট চলছে। দুপুরে পরীক্ষা হওয়ায় তখন গান হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু স্কুলের ভিতরে দিনের বেলাতেও লোক সমাগম হচ্ছে। স্টল তৈরির জিনিসপত্র নিয়েও ঢোকা-বেরোনো লেগেই রয়েছে। তাই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঢুকতে-বেরোতে নানা রকম অসুবিধা তো হচ্ছিলই।’’ কেন এই মাঠে সঙ্গীত মেলার আয়োজনের অনুমতি দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ, সেই প্রশ্ন তুলছে পুলিশ।

Advertisement

সেন্ট মেরিজ় স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। স্কুলের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা হবে না বলে জানিয়ে দিলেন তাঁর অফিসের এক আধিকারিক। তাঁর দাবি, ‘‘কারও কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। যদি কোনও অভিভাবকের অসুবিধা হয়, তা হলে তা আমাদের জানাতে পারেন। আমাদের না জানিয়ে সংবাদমাধ্যমকে কেন জানাচ্ছেন?’’ যদিও অভিভাবকদের দাবি, স্কুল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘ব্রাত্য বসু এই এলাকার বিধায়ক, সেই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীও। তাঁর এলাকার স্কুলে এ ভাবে মাঠ দখল হয়ে প্রতি বছর সঙ্গীত মেলা হচ্ছে। পড়ুয়ারা স্কুলে এলেও খেলাধুলো করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর কি কোনও সুরাহা হবে না?’’

দমদম সঙ্গীত মেলার আহ্বায়ক প্রবীর পাল বলেন, ‘‘এই মেলা ব্রাত্য বসুর উদ্যোগে হচ্ছে। স্কুল ২২ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ছিল। সেই সময়ের মধ্যেই তিন দিন মেলা হয়েছে। বাকি দু’দিন মেলার সঙ্গে স্কুল খোলা ছিল ঠিকই, তবে গানের জলসা হয়েছে রাতে। পঠনপাঠনে কোনও অসুবিধা হয়নি। আমরা বলেছি, পাঁচ দিনের মধ্যে মাঠ পুরো পরিষ্কার করে দেব। পরিষ্কারের কাজও পুরোদমে চলছে। নিয়ম মেনেই সব হচ্ছে।’’ তবে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে টেক্সট মেসেজ করা হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement