Haridevpur

আত্মহত্যা না খুন, রহস্যের মধ্যেই প্রশ্নে অ্যাসিডের সহজলভ্যতা

‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’ বা এনসিআরবি-র প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে অ্যাসিড হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হওয়ার নিরিখে শীর্ষে ছিল পশ্চিমবঙ্গ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৮
Share:

লক্ষ্মীদেবী সাউ।

মৃত্যুর কারণ অ্যাসিড জাতীয় কিছু পান করা। কিন্তু সেটি বলপূর্বক তাঁকে পান করানো হয়েছিল, না কি তিনি নিজেই পান করেছিলেন? হরিদেবপুরে লক্ষ্মীদেবী সাউ নামে এক মহিলার মৃত্যু ঘিরে রহস্য কাটেনি মঙ্গলবার রাতের মধ্যেও। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ দাবি করেছে, বলপ্রয়োগের তেমন প্রমাণ এখনও মেলেনি। কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে আরও একটি প্রশ্ন। এই ঘটনায় যদি অ্যাসিড ব্যবহার হয়ে থাকে, তা হলে তা এল কোথা থেকে? অনেকের আবার প্রশ্ন, মৃত্যু-রহস্য কাটানোর পাশাপাশি পুলিশ এই দিকটিও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে তো?

Advertisement

তাঁরা বলছেন, গত কয়েক বছরে অ্যাসিড ঘিরে ঘটা একাধিক অপরাধমূলক ঘটনার প্রেক্ষিতেই এই প্রশ্ন উঠেছে। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’ বা এনসিআরবি-র প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে অ্যাসিড হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হওয়ার নিরিখে শীর্ষে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। তবে শুধু ২০২১ সালেই নয়, ২০১৮ সাল থেকেই এ ব্যাপারে শীর্ষে এই রাজ্য। ২০১৮ সাল থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। তবে ২০১৬ সালেও শীর্ষে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। আবার ২০১৪ ও ’১৫ সালে বাংলা ছিল উত্তরপ্রদেশের পরে দ্বিতীয় স্থানে। নতুন বছরের শুরুতেই অ্যাসিড খাইয়ে খুনের অভিযোগ ওঠায় ফের আলোচনা শুরু হয়েছে, অ্যাসিড এল কোথা থেকে? অ্যাসিড ঘিরে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দেশিকা আদৌ মানা হচ্ছে কি না, সেই নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

এ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, সংগঠিত অপরাধে অ্যাসিডের ব্যবহার রুখতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, লাইসেন্স ছাড়া কোনও দোকানে অ্যাসিড রাখা বা বিক্রি করা যাবে না। আর লাইসেন্স থাকলেও কোন দোকান অ্যাসিড বিক্রি করছে, কাকে করছে— সব তথ্য রাখতে হবে থানাকে। মাসের নির্দিষ্ট সময় অন্তর এই সংক্রান্ত রিপোর্ট থানা থেকে পাঠাতে হবে উপরমহলে। অভিযোগ, নির্দেশ রয়ে গিয়েছে খাতায়কলমেই। তাই অ্যাসিড সহজলভ্যই। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য অসীম ঘোষ বললেন, ‘‘জেলা পুলিশ-প্রশাসন তো বটেই, শহরের পুলিশের কাছেও অ্যাসিড বিক্রির তথ্য থাকে না। কম দামে অ্যাসিড কিনতে পাওয়া যায় মুদির দোকানেও। যিনি কিনতে এসেছেন, তাঁর নাম-ঠিকানা লিখে রাখা তো দূর, অ্যাসিড কেন প্রয়োজন, তা-ও জিজ্ঞাসা করা হয় না। তবে দোকানে যে অ্যাসিড বিক্রি হয়, তা মূলত শৌচাগার পরিষ্কারের কাজে লাগে। আর যে অ্যাসিড নিয়ে হামলা চালানো হয়, তা মিউরিয়্যাটিক বা নাইট্রিক অ্যাসিড। যা সাধারণত ব্যবহার করা হয় সোনার দোকানে। ওই ধরনের অ্যাসিড হাতে হাতে ঘোরে কী ভাবে— এর উত্তর পাওয়া যায় না।’’ আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের দাবি, এই রাজ্যে কড়া আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। অথচ, পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশ এক সময়ে অ্যাসিড হামলার শীর্ষে থেকেও আজ প্রায় অ্যাসিড হামলা-মুক্ত। কারণ, সেখানে অ্যাসিড ব্যবহার করে অপরাধ করলে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি শাস্তি, এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।

Advertisement

অ্যাসিড-আক্রান্ত মনীষা পৈলানের মন্তব্য, ‘‘হরিদেবপুরের ঘটনা তদন্তসাপেক্ষ। অ্যাসিড ব্যবহার হয়ে থাকলে সেটা কোথা থেকে এল, তা যেন দেখা হয়! গোড়ায় না গেলে রাজ্যে এই অপরাধ কমবে না।’’ ওই ডিভিশনের এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement