প্রতীকী ছবি।
দুই তরুণের প্রাণ গেল, তবে গিয়ে টনক নড়ল প্রশাসনের। অবশেষে চিংড়িঘাটা মোড়ের ‘রোগ’ সারাতে দাওয়াই প্রয়োগের কথা রবিবার জানালেন কলকাতা পুলিশ ও বিধাননগর সিটি পুলিশের কর্তারা। কিন্তু এ শহরের দাওয়াইও যে কতটা কাজে দেবে, দিন গড়াতেই রবিবার রাতে তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল। চিংড়িঘাটার পরে এ বার বেহালা। ফের বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক সাইকেলআরোহীর।
পুলিশ জানায়, রাত ন’টা নাগাদ বেহালার পাঠকপাড়া ও ডায়মন্ড হারবার রোডের মোড়ে রায়চক-কলকাতা রুটের বেসরকারি বাসের ধাক্কায় আহত হন ভগবানলাল রায় (৬২) নামে এক সাইকেলআরোহী। সরশুনার এই বাসিন্দা সিইএসসি-র কর্মী। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। বাস-সহ চালককে আটক করা হয়েছে।
শনিবার চিংড়িঘাটার মোড়ে বাইপাস পেরোনোর সময়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হন দুই তরুণ বিশ্বজিৎ ভুঁইয়া (১৯) এবং সঞ্জয় বনু (১৯)। যার প্রেক্ষিতে বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় বাইপাসে। যে ঘটনায় দিলীপ মাইতি নামে এক ব্যক্তিকে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর-সহ একাধিক অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে পথচারী, সাইকেল ও মোটরবাইক আরোহীদের জন্য বিশেষ রাস্তা তৈরির কথা জানান কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে দু’টি ফুট ওভারব্রিজ তৈরির কথা ভাবা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। একাধিক পরিকল্পনার কথা যে ভাবা হয়েছে, তা পরিদর্শনে এসে জানিয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি শবরী রাজকুমারও।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, বেলেঘাটা ট্র্যাফিক গার্ড সংলগ্ন খালের উপরে ফুটপাথ তৈরির কাজ ইতিমধ্যে কেএমডিএ শুরু করেছে। উল্টোদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংলগ্ন ফুটপাথ তৈরির জন্য যে সকল বুথ, বাতিস্তম্ভ রয়েছে, তা সরিয়ে রাস্তা চওড়া হবে। পাশাপাশি, রাস্তার ওই অংশে খালপাড়ের উপরে সেতু পাঁচ মিটার চওড়া করার জন্য নগরোন্নয়ন দফতরকে প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। বইমেলার সময়ে একই রকম প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা রূপায়ণ হয়নি। পথচারীদের সুবিধার্থে জেব্রা ক্রসিংয়ের স্থানান্তর, বুলেভার্ড এবং নবদিগন্তের আইল্যান্ড কেটে রাস্তা তৈরির কথা প্রাথমিক ভাবে ভাবা হয়েছে। সুমিতবাবুর কথায়, ‘‘আপাতত দ্রুত পথচারী, সাইকেলের রাস্তা হচ্ছে।’’
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) আরও বলেন, ‘‘ব্রডওয়ের রাস্তা ইতিমধ্যে উন্নত হয়েছে। ফুটব্রিজের প্রস্তাব বহু দিনের।’’ ট্র্যাফিক পুলিশ জানায়, অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সময়ে বেলেঘাটা কানেক্টরের পাশাপাশি চিংড়িঘাটাতেও সাবওয়ে তৈরির লিখিত প্রস্তাব ছিল। কিন্তু কেএমডিএ-র আপত্তিতে তা হয়নি। যার প্রেক্ষিতে কেএমডিএ-র এক কর্তা জানান, চিংড়িঘাটার ওই জায়গায় সাবওয়ে তৈরির পথে মূল বাধা হল খাল। এ ছাড়া উড়ালপুলের স্তম্ভ রয়েছে। সাবওয়ে তৈরির জন্য যে জায়গা দরকার, তা ওখানে অপ্রতুল। ফুটব্রিজ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, মেট্রো প্রকল্পের কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে। কাজে ফুটব্রিজের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখার বিষয়। যদিও সুমিতবাবুর বক্তব্য, ‘‘একটি ফুটব্রিজ চিংড়িঘাটা উড়ালপুল ওঠার মুখে এবং একটি চাউলপট্টি থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত ফুটব্রিজের কথা প্রাথমিক ভাবে হয়েছে।’’ আজ, সোমবার কেএমডিএ, নগরোন্নয়ন দফতর ও পুলিশের পরিদর্শনে পরেই ফুটব্রিজের জায়গা চূড়ান্ত হবে।