অরক্ষিত: টালা সেতুর বিকল্প সেই লেভেল ক্রসিং। নিজস্ব চিত্র
নতুন পথ হল, কিন্তু পথের নিরাপত্তার ব্যবস্থা হল কি?
টালা সেতু চত্বরের রাস্তার অভিমুখ পরীক্ষামূলক ভাবে প্রায়ই বদল করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে কলকাতা পুলিশ। শুক্রবারও এ নিয়ে লালবাজারে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার। তবে এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, পথের নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা হল? পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত টালা সেতুর বিকল্প লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে যে পথ গিয়েছে তার কোনও জায়গাই সিসি ক্যামেরার নজরদারির আওতায় নেই। ওই পথ এসে মিশেছে খগেন চ্যাটার্জি রোড-বিবিবাজার মোড়ের সংযোগস্থলে। ওই মোড়ে যে সিসি ক্যামেরা রয়েছে তা চিৎপুর থানার উদ্যোগে বহু দিন আগে লাগানো। বাকি কিছু ক্যামেরা রয়েছে শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের। সেগুলির বেশির ভাগই শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় এবং আর জি কর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায়।
প্রশ্ন উঠছে, নতুন লেভেল ক্রসিং বা চিৎপুর স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তার দিকেও কি নজর রাখা হচ্ছে? শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ড মেনে নিয়েছে, তাদের অন্তর্গত ওই রাস্তায় সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে এখনও কিছু ভাবা হয়নি। অথচ অন্য রাস্তাগুলির তুলনায় এর গুরুত্ব বরং বেশিই। কারণ, গঙ্গার ধার ঘেঁষা ওই রাস্তায় পরপর রয়েছে গুদাম। যেখানে বেআইনি ভাবে জিনিস মজুতের অভিযোগ ওঠে মাঝেমধ্যেই। পাশাপাশি, কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি থাকায় ওই রাস্তার গুরুত্বও বহুগুণ। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে ওই কারখানা থেকে অস্ত্র বাইরে পাচার হওয়ার অভিযোগে ধরাও পড়েছে একাধিক ব্যক্তি। তদন্তে উঠে এসেছিল, অস্ত্র পাচারে ওই পথ ব্যবহার করার প্রসঙ্গ। এমন স্পর্শকাতর রাস্তায় ভারী গাড়ির যাতায়াত বাড়লে সেই ফাঁক গলে যে অবৈধ কাজ হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
প্রশ্ন সেখানেই।
চিৎপুর থানা সূত্রের খবর, গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি-সহ ওই এলাকায় পুলিশ এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগ মিলিয়ে প্রায় ১৪০টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তবে তার কোনওটিই লেভেল ক্রসিং সংলগ্ন রাস্তায় বা স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের ‘লরির করিডর’-এ নেই। শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের তিরিশটিরও বেশি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে চিড়িয়ামোড় থেকে বি টি রোডের উপরে এবং শ্যামবাজারের কাছে। কিন্তু নজরে নেই গুরুত্বপূর্ণ এই পথ। অথচ, পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা গত ক্রাইম কনফারেন্সেই থানার সমস্ত অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। টালা সেতু ভাঙার কাজ শুরু হওয়ার পরে চিৎপুর লকগেট উড়ালপুলকে বেশি ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ। তবে লকগেট উড়ালপুলে ক্যামেরা লাগানো থাকলেও গোটা শহরের গাড়ি যে পথে উত্তর শহরতলির দিকে যাবে সেখানে ক্যামেরার জন্য আগাম পরিকল্পনা করা হল না কেন?
ডিসি (ট্র্যাফিক) জানান, নিরাপত্তার জন্য ওই সমস্ত রাস্তায় বাড়তি পুলিশকর্মী মোতায়েন রাখা হচ্ছে। অতীতে ট্র্যাফিক পুলিশের দায়িত্ব সামলেছেন এমন প্রায় ৩০ জন পুলিশকর্মীকে টালা সেতু চত্বরের যান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ডিভিশন থেকে নিয়ে গিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন যান চলাচলের জন্য তৈরি হওয়া রাস্তায় সিসি ক্যামেরা এবং পর্যাপ্ত সিগন্যালেরও দ্রুত ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা চলছে। ডিসির কথায়, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব ওই চত্বরের সমস্ত রাস্তাকে সিসি ক্যামেরার নজরদারির মধ্যে আনা হবে।’’
এর মধ্যেই বড় অঘটন ঘটে গেলে? উত্তর নেই পুলিশের
কর্তাদের কাছে।