তখন স্কুলে দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের পরীক্ষা চলবে। ফাইল ছবি
সরকারি শোভাযাত্রার জন্য কি এ বার বন্ধ রাখা হবে স্কুলের পরীক্ষা?
এমনই আশঙ্কার মেঘ তৈরি হয়েছে স্কুলশিক্ষক মহলে। তাঁদের একাংশ বলছেন, পয়লা সেপ্টেম্বর পড়ুয়াদের ইউনেস্কোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পাঠানো কোনও মতেই সম্ভব নয়। কারণ, তখন স্কুলে দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের পরীক্ষা চলবে। কারও কারও আবার প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ হলে তো পাঠাতেই হবে, কিন্তু অভিভাবকেরা কি রাজি হবেন? শিক্ষা দফতরই বলেছে, ২৯ অগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে পরীক্ষা। ১ সেপ্টেম্বর অধিকাংশ স্কুলেই পরীক্ষা থাকবে। তা হলে শেষে পরীক্ষাই বাতিল হয়ে যাবে না তো!
পয়লা সেপ্টেম্বর ইউনেস্কোকে সংবর্ধনা দেবে রাজ্য সরকার। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই দিন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে শুরু হবে মিছিল। পুজো কমিটিগুলিও তাতে যোগ দেবে। মিছিলে গানের সঙ্গে বাঁশি, ঢোল, শাঁখ বাজানো হবে। ১০ হাজার স্কুলপড়ুয়াকে ওই অনুষ্ঠানে আনবে রাজ্য সরকার। সে দিন দুপুর ১টার মধ্যে সরকারি অফিস ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মমতা। স্কুলগুলিও ১২টার মধ্যে ছুটি হয়ে যাবে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই সরকারি বা সরকার-নিয়ন্ত্রিত অধিকাংশ স্কুলেরই মাথায় হাত পড়েছে। তারা জানিয়েছে, এ বিষয়ে শিক্ষা দফতরের কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো পড়ুয়াদের শোভাযাত্রায় পাঠাতে হলে পরীক্ষার রুটিন বদলাতে হবে। এমনিতেই করোনার কারণে শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে যাওয়ায় স্কুলের পঠনপাঠন পিছিয়ে আছে। এখন জোরকদমে স্কুল চলছে। এর মধ্যে ফের পড়ুয়াদের নিয়ে টানাটানি কেন? প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ, বিরক্ত প্রধান শিক্ষকেরা।
যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বললেন, “এখনও নির্দেশিকা আসেনি। কিন্তু যেটুকু শুনলাম, তাতে পরীক্ষা না নিয়ে ছেলেদের শোভাযাত্রায় পাঠানো খুব কঠিন। প্রাথমিকের পড়ুয়াদের হয়তো পাঠাতে পারব। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের ছেলেদের পাঠাতে পারব না। ওই দিন ওদের পরীক্ষা রয়েছে।”
তাঁরা এক জন ছাত্রীকেও পাঠাবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন উত্তর কলকাতার সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়তী মজুমদার মিত্র। তিনি বলেন, “২৯ অগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের ছুটি। ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার। এর মধ্যে যদি ১ সেপ্টেম্বর ছুটি দিতে হয় বেলা ১২টার মধ্যে, তা হলে সে দিন পরীক্ষা নেওয়াই যাবে না। আমাদের মেয়েরা শোভাযাত্রায় যাবে না।” জয়তীর প্রশ্ন, বৃষ্টি হলে শোভাযাত্রায় গিয়ে মেয়েরা ভিজে যেতে পারে। তখন যদি ঠান্ডা লেগে কেউ পরীক্ষা দিতে না পারে, তা হলে সেই দায় কে নেবে?
মিত্র ইনস্টিটিউশনের (ভবানীপুর) প্রধান শিক্ষক রাজা দে বললেন, “সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা ১২টার মধ্যে শেষ হবে না। তা হলে সে দিন ওই সময়ে স্কুল ছুটি দেওয়া কী করে সম্ভব?” ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর প্রশ্ন,“ইউনেস্কোকে সম্মান জানাতে পড়ুয়াদের নিয়ে টানাটানি কেন? অন্য কোনও ক্ষেত্র থেকেও তো লোকজনকে শোভাযাত্রায় আনা যায়। এই বর্ষা ও পরীক্ষার মরসুমে পড়ুয়াদের রেহাই দেওয়া হোক। ওরা প্রতিবাদ করতে পারে না বলে জোর করে শোভাযাত্রায় হাঁটাবেন!” কোনও কোনও শিক্ষকের মতে, পরীক্ষার বিষয়টি হয়তো মুখ্যমন্ত্রী জানেন না। তাঁদের প্রশ্ন, শিক্ষা দফতরের কর্তারা কেন মুখ্যমন্ত্রীকে সমস্যার দিকটা খুলে বলছেন না? এ বিষয়ে শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।