ভোটগ্রহণ এবং গণনার মধ্যে এত ‘স্বল্প’ সময় (এক দিন) কেন রাখা হল, প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। ফাইল ছবি
অশান্তি-হামলার অভিযোগের পরে সময়-স্বল্পতা নিয়ে প্রশ্ন। কলকাতার পুরভোটে পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা যে আপাতত নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। পুনর্নির্বাচন করানোর সময়ও কার্যত আর নেই। আজ, মঙ্গলবার ভোটগণনা ও ফল ঘোষণা। এই অবস্থায় ভোটগ্রহণ এবং গণনার মধ্যে এত ‘স্বল্প’ সময় (এক দিন) কেন রাখা হল, প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। কমিশনের বক্তব্য, ঘোষণার দিনেই ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়েছিল। তখন এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি কোনও দলই।
কলকাতার পুরভোট শেষের পর থেকে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন বিরোধীরা। কিন্তু সোমবার ‘রিজ়ার্ভ’ দিনে এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ফলে সুর আরও চড়িয়েছে বিরোধী শিবির। রবিবারের ভোটকে কমিশন মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ বললেও বিরোধীরা তাতে খুশি নন। তাই পুনর্নির্বাচনের দাবিতে সোমবারেও দিনভর সরব ছিলেন তাঁরা।
কমিশন সূত্রের খবর, রবিবার ভোট শেষের পরে প্রিসাইডিং অফিসার এবং পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট হাতে আসে রাতে। সেই সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখার কাজ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। কমিশনের বক্তব্য, শেষ পর্যন্ত পুনর্নির্বাচনের দাবি সমর্থিত হয়, এমন কোনও তথ্য সেই যাচাই পর্ব থেকে উঠে আসেনি। তাই পুনর্নির্বাচনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আজ, মঙ্গলবার ভোটগণনা। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জারি করা ভোট-নির্দেশিকা বলবৎ থাকবে কাল, বুধবার, ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা যে কার্যত নেই, তা মেনে নিচ্ছেন কমিশন-কর্তাদের অনেকে।
যদিও বিজেপির দাবি, গোটা নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে ভোট নিতে হবে। পুনর্নির্বাচনের দাবিতে এ দিন কমিশনের কার্যালয়ে বাম এবং কংগ্রেস বিক্ষোভ দেখিয়েছে, ধর্না দিয়েছে। প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু এ দিন কমিশনকে চিঠি লিখে গণনা স্থগিত রেখে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। বিরোধীদের বক্তব্য, সাধারণত ভোটগ্রহণ ও গণনার মধ্যে কিছুটা ব্যবধান রাখা হয়। তাতে কোথাও ভোটগ্রহণে কোনও সমস্যা থাকলে পুনর্নির্বাচন করা যেতে পারে। কিন্তু এই ভোটে হাতে মাত্র একটি দিন সময় থাকায় তা সম্ভব হল না। তাঁদের আরও দাবি, ভোট শেষের পরে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের রিপোর্ট তৈরি করতে সময় লাগা স্বাভাবিক। সেই রিপোর্ট কমিশনের কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে যে রাত হয়ে যেতে পারে, সেটাও বোঝা যায়। ফলে ১৪৪টি ওয়ার্ডের রিপোর্ট যাচাইয়ে আরও সময় লাগাটাই স্বাভাবিক। তাই আরও কিছুটা সময় ধরা থাকলে ভাল হত।
তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক কর্তার বক্তব্য, আগে থেকেই এই নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়ে রয়েছে। ভোট ঘোষণার পরে একাধিক বার সর্বদলীয় বৈঠকও করেছে কমিশন। কিন্তু ভোট ঘোষণার আগে বা পরে কেউ সময় নিয়ে আপত্তি জানাননি। বিধানসভা বা লোকসভা ভোট অনেক বড় এলাকা এবং কেন্দ্র জুড়ে হয়। সেখানে ভোটারের সংখ্যা এবং ব্যাপ্তিও অনেক বেশি। তখন ভোটগ্রহণ এবং গণনার মধ্যে বেশি সময় থাকা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু এই ভোট শুধু কলকাতা পুরসভার। তাই তার জন্য যতটা সময় দরকার ছিল, সেটাই বরাদ্দ করা হয়েছে। ফলে গোটা পরিস্থিতিকে সন্দেহের চোখে দেখা যুক্তিযুক্ত নয়।