নির্মীয়মাণ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পথ বদলের পক্ষে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে বলে মনে করে কলকাতা হাইকোর্ট।
স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো নিয়ে মামলা রুজু করেছিল। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া বলেন, অনেক যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এখন কাজ করতে না দিলে প্রকল্পই বানচাল হয়ে যাবে। কেন রাজ্য সরকার সেন্ট্রাল স্টেশনের বদলে এসপ্ল্যানেডে কেন্দ্রীয় স্টেশন করতে চায়, অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তা জানতে চান বিচারপতি। অশোকবাবু জানান, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোপথের সমস্যা নিয়ে আগামী মঙ্গলবার হাইকোর্টকে বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে।
এই প্রকল্পে কী সমস্যা হচ্ছে, এ দিন তা মেট্রো রেলের আইনজীবীর কাছে জানতে চান বিচারপতি। আইনজীবী রাজকুমার বসু বলেন, প্রকল্পের তহবিল নিয়ে অসুবিধা আছে। যে নকশা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে, রাজ্য সরকার তাতে কিছু বদল চায়। কিন্তু তার জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে সেই টাকা না পাওয়া গেলে নকশা বদল করাও সম্ভব নয়।
কেন্দ্রের আইনজীবী কৌশিক চন্দের কাছে বিচারপতি জানতে চান, কেন্দ্রীয় সরকার কি এই প্রকল্পে টাকা দেবে? কৌশিকবাবু বলেন, তিনি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন। তিনি জানান, প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের। ৬০ শতাংশ দেওয়ার কথা রেলের।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নকশা-পথে রাজ্য সরকার কী ধরনের পরিবর্তন চায়, এ দিন হাইকোর্টকে সে ব্যাপারে অবহিত করেন অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল। তিনি জানান, রাজ্য চায় ধর্মতলায় এই মেট্রোর কেন্দ্রীয় স্টেশন তেরি করা হোক। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যেখান থেকে মানুষ বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবেন, সেটাই কেন্দ্রীয় স্টেশন হওয়া উচিত।
বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়ার প্রশ্ন, ধর্মতলা থেকে বাস টার্মিনাস সরানো হচ্ছে। তা হলে ওখানে কী করে কেন্দ্রীয় স্টেশন হবে? তিনি মনে করেন, কলকাতা লন্ডন হলে পিকাডিলি টিউব স্টেশনের মতো সেন্ট্রাল স্টেশনে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জংশন স্টেশন করা যেতে পারে।
বিচারপতির আরও মন্তব্য, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন রাজ্য সরকার মানুষের কথা ভেবে পথ বদলের কথা বলছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। নির্মাণ সংস্থার আইনজীবী জয়ন্ত মিত্রও এ দিন আদালতে বলেন, “অনেক যন্ত্র মাটির তলায় ঢোকানো হয়েছে। হুট করে তো আর সে সব উঠিয়ে নেওয়া যায় না!” বিচারপতি বলেন, “যন্ত্র কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখন কাজ করতে না দিলে তো প্রকল্পই বন্ধ হয়ে যাবে।”
এর পরেই সরকারের কোথায় অসুবিধা, অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে তা বিশদে জানতে চান বিচারপতি। অশোকবাবু জানান, আগামী মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে তিনি হাইকোর্টে হাজির হবেন।