School Reopening

পড়ুয়া তলানিতে, দাঁত চেপে লড়ছে শহরের প্রি-স্কুল

শহরের একটি নামী প্রি-স্কুল চেনের ভিআইপি রোড শাখার প্রিন্সিপাল সুজাতা ভারতিয়া জানাচ্ছেন, তাঁদের ওই শাখায় আগে পড়ত প্রায় ২০০টি শিশু।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু স্কুল। কিছু স্কুল করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে নতুন করে শুরু করার কথা ভাবছে। আবার, অনলাইনে ক্লাস নিয়ে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু স্কুল।

Advertisement

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে কবে, পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের এখন সেটাই প্রশ্ন। তবে অধিকাংশ অভিভাবকই জানতে চাইছেন, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হবে কবে? কিন্তু এর বাইরেও শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র প্রি-স্কুল। সেগুলির কর্ণধারেরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক মাসে সব চেয়ে খারাপ অবস্থা তাঁদেরই। তাঁদের আশঙ্কা, এপ্রিলের মধ্যে প্রি-স্কুল না খুললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

শহরের একটি নামী প্রি-স্কুল চেনের ভিআইপি রোড শাখার প্রিন্সিপাল সুজাতা ভারতিয়া জানাচ্ছেন, তাঁদের ওই শাখায় আগে পড়ত প্রায় ২০০টি শিশু। এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০-৩৫। সুজাতাদেবী বলেন, ‘‘গত বছর মার্চের শেষে যখন লকডাউন শুরু হল, সেই সময়টাই আমাদের স্কুলে ভর্তির মরসুম। লকডাউনের কারণে অনেকেই ভর্তি হয়নি। এখন যে ৩০-৩৫ জন পড়ুয়া রয়েছে, তারা আগামী শিক্ষাবর্ষে হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে গেলে আর কি পড়ুয়া আসবে? তবে আমাদের অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা আছে।’’

Advertisement

প্রি-স্কুলে ভর্তি হয় দেড় থেকে দু’বছরের কচিকাঁচারা। তারা সেখানে পড়ে সাড়ে তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত। ওই শিশুদের অনলাইন ক্লাস কতটা বাস্তবসম্মত? উত্তরে নিউ টাউনের একটি প্রি-স্কুলের প্রিন্সিপাল চন্দ্রিকা রামকৃষ্ণন জানান, কচিকাঁচাদের অনলাইন ক্লাসের সময়ে তাঁদের অভিভাবকেরা থাকছেন। তিনি বলেন, ‘‘বড় স্কুলে যারা ভর্তি হচ্ছে, তাদের ইন্টারভিউ অনলাইনেই হচ্ছে। ফলে যে বাচ্চারা অভিভাবকদের সাহায্য নিয়ে অনলাইন ক্লাস করছে, বড় স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে তারা কিছুটা হলেও সুবিধা পাচ্ছে।’’

যদিও অধিকাংশ অভিভাবকই মনে করছেন, দেড়-দু’বছরের বাচ্চাদের অনলাইন ক্লাসে বসিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন। ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা এক পড়ুয়ার অভিভাবক বলেন, ‘‘স্কুলে গেলে আমার বাচ্চা আর পাঁচ জনের সঙ্গে খেলতে খেলতে তবু কিছু শেখে। বাড়িতে তো ওকে ল্যাপটপের সামনে বসিয়েই রাখা যায় না।’’ তবে অভিভাবকদের একাংশের মতে, স্কুল খোলার আগে সেখানকার শিক্ষক এবং পরিচারিকাদের করোনার প্রতিষেধক দেওয়া বাধ্যতামূলক করা দরকার।

অনলাইন ক্লাস যে ক্লাসরুমের বিকল্প নয়, তা মনে করেন অনেক প্রি-স্কুলের কর্ণধারই। এমনই একটি স্কুলের তরফে নবনীতা বসু বলেন, ‘‘আমাদের অনলাইন ক্লাস হয় ঠিকই। কিন্তু তা অফলাইন ক্লাসের বিকল্প কখনওই নয়। কলকাতায় আমাদের স্কুলের সাতটি শাখার মধ্যে দু’টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেগুলি চলছে, সেখানেও পড়ুয়া সংখ্যা তলানিতে।’’ তিনি জানান, বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে অধিকাংশ প্রি-স্কুল। ছাত্রছাত্রী না থাকলে শুধু ভাড়া গুনে কত দিন চালানো সম্ভব?

তবে এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও প্রি-স্কুলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে কচিকাঁচাদের পড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে জানালেন শহরের একটি প্রি-স্কুল চেনের কর্ণধার তমাল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাচ্চাদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে পড়াচ্ছি। সেখানে তাদের খেলার ছলে, অ্যানিমেশনের মাধ্যমে পড়ানো হয়। যা পড়ানো হয়, সেগুলো রেকর্ড করে রাখা হয়। ফলে অভিভাবকেরা সেই রেকর্ডিং দেখে পরে তাঁদের বাচ্চাদের পড়াতে পারেন। অনেক বাচ্চার মা-বাবা দিনে কাজে যান। তাই সন্ধ্যাতেও ক্লাসের ব্যবস্থা রেখেছি।’’

তমালবাবু জানান, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিন বছর প্রি-স্কুলে পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে এখন প্রি-স্কুলের গুরুত্ব বেড়েছে। তাঁর মত, করোনা কালে প্রি-স্কুল ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবাইকে ফের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement