ট্যাক্সি-নেতার মোটর ট্রেনিং স্কুলেই অনিয়ম

সর্ষের মধ্যেই ভূতের রমরমা! মোটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মালিকদের সংগঠনের মূল নেতা তিনি। তিনিই আবার ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’ (বিটিএ)-এর সর্বোচ্চ নেতা। সেই বিমল গুহ, তাঁর ছেলে ও জামাইয়ের মোটর ট্রেনিং স্কুলেই ব্যাপক হারে অনিয়ম ধরল পরিবহণ দফতর।

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৩
Share:

সর্ষের মধ্যেই ভূতের রমরমা!

Advertisement

মোটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মালিকদের সংগঠনের মূল নেতা তিনি। তিনিই আবার ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’ (বিটিএ)-এর সর্বোচ্চ নেতা। সেই বিমল গুহ, তাঁর ছেলে ও জামাইয়ের মোটর ট্রেনিং স্কুলেই ব্যাপক হারে অনিয়ম ধরল পরিবহণ দফতর। সেই অনিয়ম সংশোধনে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পরিবহণ দফতরের অভিযোগ, তার মধ্যে পদক্ষেপ না করায় স্কুলগুলিকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিমলবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘এ সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বেকার যুবকদের পক্ষে অনলাইন লাইসেন্সের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছিলাম। তা ভাঙতেই পাবলিক ভেহিক্যাল্‌স দফতরের (পিভিডি) তরফে এই প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ।’’

পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, কলকাতায় যাতে ঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গাড়িচালক তৈরি হয়, তা নিশ্চিত করতে শহরের ৫০টি মোটর ট্রেনিং স্কুল পরিদর্শন শুরু করে পিভিডি। ১৯টি স্কুলে অনিয়ম ধরা পড়েছে কিংবা কর বাকি থাকার প্রমাণ মিলেছে। বাকি স্কুলগুলি পিভিডি-র নির্দেশ মেনে ব্যবস্থা নিলেও ওই তিন নেতার স্কুল এখনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেই অভিযোগ।

Advertisement

পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, বিমল গুহ, তাঁর ছেলে সুমন গুহ ও জামাই অসীম বসু— তিন জনেই মোটর ট্রেনিং স্কুলের সংগঠন ও ট্যাক্সিমালিক সংগঠনের নেতা। তাঁরা আবার মোটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটও চালান। বিমলবাবু ও তাঁর ছেলের সংস্থার নাম যথাক্রমে প্রিমিয়াম মোটর ট্রেনিং স্কুল ও প্রিমিয়াম টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট। কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অসীমবাবু চালান ভবানীপুর মোটর ট্রেনিং স্কুল। তিনটি স্কুলের ক্ষেত্রেই অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে দাবি পিভিডি-র মোটরযান পরীক্ষকদের।

এক পরীক্ষক বলেন, ‘‘২০১৪-র জুন মাসে সুমনবাবুর স্কুল পরীক্ষা করে বহু অনিয়ম ধরা পড়ে। সেখানে নিয়ম মেনে ক্লাসরুম নেই। নেই শিক্ষিত প্রশিক্ষকও। শিক্ষায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও ছিল না। এর পরেই মৌখিক ভাবে সুমনবাবুকে ওই সব খামতি দূর করার নির্দেশ দেওয়া হয়।’’ ওই পরীক্ষক জানান, এক বছরেও খামতি দূর না করায় এই জুনে সুমনবাবুকে শো-কজ করে পিভিডি। খামতি দূর করতে তাঁকে ৭ দিন সময়ও দেওয়া হয়। কিন্তু তার এক মাস পরেও কোনও পদক্ষেপ না-করায় স্কুলটিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পরীক্ষকের অভিযোগ, ‘‘এত কিছুর পরেও স্কুলের পরিকাঠামো ঠিক করার বিষয়ে হেলদোল নেই সুমনবাবুর।’’

পরিকাঠামো নেই অসীমবাবুর ভবানীপুর মোটর ট্রেনিং স্কুলেও। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের গাড়িও ঠিক মতো নেই বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, বিমলবাবুর স্কুলে পরিকাঠামো না থাকার পাশাপাশি দু’লক্ষেরও বেশি টাকার কর সরকারের কাছে বকেয়া।

বিমলবাবুর অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আসলে, পিভিডি অনলাইন লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে। যার ফর্ম রয়েছে শুধু বাংলা এবং ইংরেজিতে। আমরা তা উর্দুতেও করার দাবি জানিয়েছিলাম। পাশাপাশি হাতে আবেদন করার প্রক্রিয়াও চালু রাখতে বলি। পিভিডি-র অধিকর্তা আমাদের দাবি মানেননি। আমরা পাল্টা আন্দোলন শুরু করতেই আমাদের উপরে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।’’ প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন বিমলবাবু।

অনিয়মের অভিযোগ মেনে নিয়ে অসীমবাবু বলেন, ‘‘কিছু খামতি অবশ্যই ছিল। পিভিডি সেগুলি ধরিয়ে দিয়েছে। আমরা তা সংশোধন করে নিচ্ছি। এতে তো আখেরে আমারই লাভ। স্কুলটা আরও ভাল হবে।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘পিভিডি যখন খুশি পরিদর্শন করতে পারে। কিন্তু আন্দোলন করায় পাল্টা চাপ দিতে এমন না করলেই পারত।’’

পিভিডি-র অধিকর্তা সি মুরুগান অবশ্য বিমলবাবুদের অভিযোগ মানেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সব মোটর ট্রেনিং স্কুল পরিদর্শন করছি। মোটর ট্রেনিং স্কুল ভাল হলে, সঠিক চালক তৈরি হবে। দুর্ঘটনাও কমবে। অন্য সব স্কুল আমাদের নির্দেশ মেনেছে। বকেয়া টাকাও জমা দিয়েছে। ওঁরাই শুধু মানছেন না। না-মানলে দফতরের নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement