স্মৃতি: করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত শিল্পী অরুণ পাল। নিজস্ব চিত্র
কোভিড কেড়ে নিয়েছে শিল্পীকে। এ বার দুর্গাপুজোর মণ্ডপে সেই শিল্পীর স্মরণে মূর্তি বানাচ্ছেন আর এক শিল্পী।
প্রতিমা বানাতে বানাতেই গত বছর করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন বছর পঞ্চাশের শিল্পী অরুণ পাল। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছিলেন। কিন্তু করোনা পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় তাঁর মৃত্যু হয়। কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। অরুণবাবুর আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি তাঁর সহশিল্পীরা। তাঁদেরই কয়েক জন ঠিক করেন, পরের পুজোয় অরুণবাবুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বানানো হবে তাঁর মূর্তি।
বাগুইআটির একটি মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে দেখা যাবে শিল্পীর ১৮ ফুটের মূর্তি। সেটি বানাচ্ছেন আর এক শিল্পী, অরুণবাবুরই ঘনিষ্ঠ সম্রাট ভট্টাচার্য। সম্রাট বলেন, “মৃৎশিল্পীরা কষ্ট করে প্রতিমা তৈরি করেন। অথচ তাঁরা আড়ালেই থেকে যান। অরুণদাও প্রচারের আলোর আড়ালে থাকতে ভালবাসতেন। তাঁর কাজ ও তাঁকে মানুষের মধ্যে তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ।” সম্রাট জানান, শুধু অরুণবাবুর মূর্তিই নয়, মণ্ডপসজ্জাও হবে তাঁর কাজ নিয়ে। থাকবে তাঁর ঠাকুর তৈরির গোলা, তিনি কী ভাবে কাজ করতেন সমস্তটাই। বাগুইআটির যে ক্লাব শিল্পীকে থিম করে মণ্ডপসজ্জা করছে, তার সম্পাদক পার্থ সরকার বলেন, “নানা অসুবিধার মধ্যে এক জন মৃৎশিল্পীকে কাজ করতে হয়। অথচ তাঁদের কেউ জানেন না। তাই শিল্পী ও তাঁর কাজকেই পুজোর ভাবনায় তুলে ধরছি।”
কালীঘাটের বাসিন্দা অরুণবাবু মূর্তি তৈরি করতেনও সেখানেই। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত বছর থেকেই সর্বত্র বরাত কম। যেটুকু আসছে, তা ধরে রাখতে করোনার মধ্যে সাবধানতা অবলম্বন করে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে। ‘কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক বাবু পাল জানান, সপ্তাহে দু’দিন কুমোরটুলি জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে। শিল্পীদের প্রতিষেধকের ব্যবস্থাও হয়েছে। বাবু বলেন, “এমনিতেই প্রতিমার বায়না কম। তার মধ্যে শিল্পীর করোনা হয়ে গেলে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।”