পুজোকর্তাদের একটি বড় অংশ উৎসবের ক’দিন বাইকের দৌরাত্ম্যের প্রসঙ্গটি তোলেন।
এ বারের পুজোতেও কি শহরের পথে মাত্রা ছাড়াবে বেপরোয়া মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য? উৎসবে মেতে ওঠার নামে ট্র্যাফিক-বিধি ভাঙার পুরনো রোগও কি আগের মতোই বেলাগাম হয়ে উঠবে? উত্তরটা মিলবে পুজোর সময়েই। তবে, শহরের একাধিক পুজো কমিটি আগেভাগেই ওই দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফেও। তবে, এত সবের পরেও বাইকচালকদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না, সেই সংশয়টা থেকেই যাচ্ছে।
রবিবার পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকে বসেছিলেন লালবাজারের কর্তারা। সেখানে পুজোকর্তাদের নানা সমস্যার কথা শোনেন তাঁরা। সেখানেই পুজোকর্তাদের একটি বড় অংশ উৎসবের ক’দিন বাইকের দৌরাত্ম্যের প্রসঙ্গটি তোলেন। এ বছর গত বারের মতো বিধিনিষেধ না থাকায় সেই দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। সেই আশঙ্কা থেকেই তাঁরা যানশাসনে আরও কঠোর পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন। এমনটাই জানাচ্ছেন শহরের একাধিক পুজোকর্তা। কিন্তু তার পরেও বাইক-দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে কি না, তা নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন। উত্তর কলকাতার গৌরীবেড়িয়ার পুজোর অন্যতম কর্তা মান্টা মিশ্র বলেন, ‘‘গত বছর এমনিতেই করোনার জন্য ভিড় কম ছিল। নানা বিধিনিষেধও ছিল। তাতেও বাইক ও গাড়ির দাপটে রাস্তায় দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। নিয়ম-নীতি মানার কোনও বালাই ছিল না। এ বছর এমনিতেই গত বছরের তুলনায় ভিড় বাড়বে। তাই আমরা আতঙ্কিত। পুলিশ প্রথম থেকেই কঠোর না হলে এই দৌরাত্ম্য আটকানো মুশকিল।’’
একই সুর আলিপুরের এক পুজোকর্তার গলাতেও। তিনি বললেন, ‘‘বাইকের যা দৌরাত্ম্য চলে, তার জেরে পুজোর দিনে দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কার? সে ক্ষেত্রে তো উৎসবটাই মাটি হবে। আমরা চাই, বছরের বাকি দিনগুলির মতো পুজোর ক’দিনেও কঠোর হোক পুলিশ। সেই দাবি পুলিশের কাছে জানানো হয়েছে।’’
উৎসবের নামে ট্র্যাফিক-বিধি ভাঙার প্রবণতা অবশ্য নতুন নয়। প্রতি বছরই পুজোর সময়ে বাইক-দৌরাত্ম্যের একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। গত বছরও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ঘটেছিল ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনাও। পুজোর শহরে ট্র্যাফিক বিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি মত্ত অবস্থাতেও বাইক চালানোর দেদার অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, বিনা হেলমেটে একাধিক জনকে পিছনে বসিয়ে গতির তুফান তোলা, ট্র্যাফিক সিগন্যাল না মানা অথবা নো-পার্কিং জ়োনে বাইক ঢুকিয়ে দেওয়ারও ভূরি ভূরি অভিযোগ ওঠে। পুলিশের বিরুদ্ধেও পুজোর সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ঢিলেমির অভিযোগ ওঠে। এ বছর সেই কারণেই আগে থেকে পুলিশের কাছে কড়াকড়ির আবেদন জানিয়ে রেখেছেন পুজোকর্তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, তাদের তরফেও বাইক-দৌরাত্ম্য বন্ধ করার ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় আরও বেশি সংখ্যক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে নামিয়ে যানশাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। সেই সঙ্গে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালালেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘আসলে প্রতিটি উৎসবেই ট্র্যাফিক-বিধি কিছুটা শিথিল করা হয়। অনেকেই তার সুযোগ নেন। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না।’’
আর এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘গত দু’বছরের তুলনায় এ বছর উৎসবের ব্যাপকতার কথা ভেবে বেশ কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় আরও বেশি সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন। যানশাসনেও থাকবে বিশেষ নজরদারি। প্রযুক্তির ব্যবহারেও জোর দেওয়া হবে। প্রয়োজনে কঠোর হাতে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’’