হয়রানি: ধর্মঘটের জেরে শিয়ালদহ স্টেশনে ট্যাক্সির জন্য লম্বা লাইন যাত্রীদের।
অ্যাপ-ক্যাবের সঙ্গে হলুদ ট্যাক্সি। জোড়া ধর্মঘটের জেরে মঙ্গলবার প্রবল ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হল শহরবাসীকে। চালকদের প্রাপ্য লভ্যাংশ বাড়ানোর দাবিতে সোম ও মঙ্গলবার অ্যাপ-ক্যাবের চালকেরা ধর্মঘটে শামিল হয়েছিলেন। মঙ্গলবার ছিল সেই ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন। অন্য দিকে, পুলিশি জুলুমের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার পথে নামে ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ও। সব মিলিয়ে গাড়ি না পাওয়ায় চরম সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ।
এ দিন সকাল থেকেই রাস্তায় অ্যাপ-ক্যাব বা সাধারণ ট্যাক্সি— কিছুরই প্রায় দেখা মেলেনি। যার জেরে সমস্যায় পড়েন অফিস বা স্কুল-কলেজমুখী যাত্রীদের একটি বড় অংশ। শিয়ালদহ স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও ট্যাক্সি না পেয়ে শেষমেশ ঢাকুরিয়ার বাড়ি থেকে গাড়ি আনিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা দেরিতে বাড়ি পৌঁছন হিমানীশ সরকার। হিমানীশবাবুর কথায়, ‘‘স্টেশনে এসে এই ধর্মঘটের কথা জানতে পারি। ট্যাক্সি বা অ্যাপ-ক্যাব নিয়ে বাড়ি যাব বলে ঠিক ছিল।’’
এ দিন শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাপ-ক্যাব বা সাধারণ ট্যাক্সি না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে অটো ধরছেন। আবার যে সব সাধারণ ট্যাক্সি এ দিন পথে নেমেছিল, তারাও মওকা বুঝে ইচ্ছেমতো ভাড়া হেঁকেছে বলে অভিযোগ। বেলেঘাটার বাসিন্দা মায়া কর নামে এক মহিলা বললেন, ‘‘কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে কোনও অ্যাপ-ক্যাব পাচ্ছিলাম না। শেষে এক হলুদ ট্যাক্সি রাজি হয়। কিন্তু ট্যাক্সিচালক এই কয়েক কিলোমিটার রাস্তার জন্য ১৫০ টাকা ভাড়া চাইলেন!’’ কলকাতা স্টেশনের অবস্থাও ছিল একই রকম। তবে রাজ্য পরিবহণ দফতরের দাবি, এ দিন যাত্রী হয়রানি ঠেকাতে হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে অতিরিক্ত বাস চালানো হয়েছে।
বিধাননগর পুর এলাকার পাঁচ নম্বর সেক্টর এবং নিউ টাউনের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুকে দুর্ভোগ ছিল সব থেকে বেশি। কারণ, সেখানে গণ পরিবহণের সংখ্যা এমনিতেই কম। অবস্থা সামাল দিতে তাই অতিরিক্ত বাস চালিয়েছে পরিবহণ দফতর। কিন্তু তাতেও চাহিদা সামলানো যায়নি। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুকের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, রাত বাড়লে বাসের সংখ্যা কমে যায়।
সাধারণ ট্যাক্সিচালকদের উপরে ‘পুলিশি নির্যাতনের’ প্রতিবাদে এ দিন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র ডাকে ওয়েলিংটন থেকে মিছিল বার হয়ে তা যায় লালবাজার পর্যন্ত। সেখানে কলকাতা পুলিশের সদর দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয় সংগঠনের তরফে। ওয়েলিংটনে মিছিল শুরু হওয়ার সময়ে মিছিলকারীদের মধ্যে কয়েক জন পথে নামা ট্যাক্সির চালকদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাঁরা গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ। ওই ঘটনা প্রসঙ্গে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র আহ্বায়ক নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘যিনি বা যাঁরা ওয়েলিংটনে ট্যাক্সিচালকদের মারধর করেছেন, তাঁদের আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমাদের কোনও সমর্থক এই ঘটনায় যুক্ত নন।’’
এ দিন ট্যাক্সি সংগঠনের ওই মিছিলের জেরে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য যানজট হয়। মিছিলকারীদের আটকে দেওয়া হয় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে। তাই তাঁদের কয়েক জন প্রতিনিধি লালবাজারে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসেন। ‘পুলিশি নির্যাতনের’ অভিযোগে এ দিন জনা তিরিশ অ্যাপ-ক্যাব চালকও বিকেল তিনটে নাগাদ রাজাবাজার মোড়ে মিছিল করে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় স্মারকলিপি দেন।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ধর্মঘট সফল ও স্বতঃস্ফূর্ত। আশি থেকে পঁচাশি শতাংশ অ্যাপ-ক্যাব রাস্তায় নামেনি। তবে আমাদের দাবি যদি কর্তৃপক্ষ না মানেন, তা হলে আমরা আরও বৃহত্তর
আন্দোলনে নামব।’’