অদম্য: প্রতিবাদ অব্যাহত পার্ক সার্কাস ময়দানে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
দিল্লির নুর-ই-ইলাহি এলাকার ধোঁয়ার কুণ্ডলী কিংবা পাথর ছোড়াছুড়ির দৃশ্য ফোনে ঢুকে পড়েছে ভরবিকেলেই। মঞ্চের এক কোণে স্মার্টফোন হাতে কয়েক জন থমথমে মুখে সে দিকে তাকিয়েছিলেন। সোমবার বিকেলে পার্ক সার্কাসের মঞ্চ থেকে মাইক হাতে এ তল্লাটের অন্যতম চেনা মুখ রত্না সাহা রায় সবাইকে গান শুনতে ডাকলেন। দিনের ব্যবসা শেষ করে চারটেয় মাঠমুখো হকার মহম্মদ নৌশাদ, শেখ আমিরেরা এর পরে গানের সুরেই জমে গেলেন।
এ দিন বিকেলে যখন স্মার্টফোনে দিল্লির হাল-হকিকত নিয়ে বিক্ষিপ্ত উৎকণ্ঠার স্বর আসছে, ঠিক তখনই পার্ক সার্কাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি গানের দল নজরুলের গান গাইছে। ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব, জাত জালিয়াত খেলছে জুয়া/ ছুঁলেই তোর জাত যাবে, জাত ছেলের হাতের নয় তো মোয়া’! পরপর গানে এ দিন বিকেলে অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পে নাগরিকদের কষ্টের আখ্যান ছাড়াও সুভাষচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরামের ফাঁসি বা বিদ্যাসাগরকে নিয়ে সুরও ভেসে আসছিল কলকাতার ‘শাহিন বাগে’। আর তার তালে তালে হাততালি দিচ্ছিল পোস্টার হাতে বসে থাকা মা ও শিশুর দল।
সন্ধ্যায় পার্ক সার্কাসের অবস্থানের আহ্বায়ক আসমত জামিল বললেন, ‘‘চারপাশে যা ঘটছে, তাতে আমাদের জেদ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এ মাঠে ভিড় আরও বাড়বে। দিল্লিতে যা-ই ঘটুক, অহিংসা ও শান্তির পথে পূর্ণ আস্থা রেখে আমরা লেগে থাকব।’’ অনেকটা একই সুর খিদিরপুরের নবাব আলি পার্কের মাহউইশ খান, ইকরা সিদ্দিকি, বলপ্রীত কউর বা রাজাবাজারের জ়াফর আলম, তৌসিফ আহমেদের গলায়। স্মার্টফোনে আসা দিল্লির ছবি দেখার ফাঁকেই জ়াফর বললেন, ‘‘যত মারবে, তত বাড়বে। ওরা এ বার শান্তিপূর্ণ লড়াইয়ের জোরটা টের পাবে।’’
তবে শুধুমাত্র দিল্লি নিয়ে উৎকণ্ঠাতেই কুঁকড়ে থাকেনি প্রতিবাদী জনতা। প্রতিবাদের রাস্তা নিয়ে ধ্রুব রাঠি, কানহাইয়া কুমার, যোগেন্দ্র যাদব প্রমুখ কী বলছেন, সে বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র শুরু হল সন্ধ্যার রাজাবাজারে। তাতে বলা হচ্ছে, বাড়িতে সরকারি লোকজন এনপিআর-এ নাম তোলাতে এলেও কী ভাবে ভদ্র ভাবে ঠেকাতে হবে।
দিল্লির হিংসার মুখে লড়তে পারবে তো শাহিন বাগ? প্রশ্নটা কলকাতাতেও ঘুরপাক খাচ্ছে। শাহিন বাগ কলকাতাকেও প্রতিবাদে প্রেরণা জুগিয়েছে। কিন্তু নিজের বিশ্বাসের জমিতে পা রেখে আপাতত লড়াই চালিয়ে যেতেই নাছোড় এ শহর।