দাবি-পথ: সরস্বতী পুজোর সজ্জাতেও এনআরসি-প্রতিবাদের ছোঁয়া। বুধবার, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
সরস্বতী পুজো উপলক্ষে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বার সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা। কোথাও আবার মণ্ডপসজ্জায় সরাসরি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বার্তা।
উত্তর কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল চত্বরে ঢুকলে মনে হবে, সেখানে তৈরি করা হয়েছে একটি ছোটখাটো ভারত। থার্মোকল দিয়ে তৈরি মন্দির, মসজিদ, গির্জা আর ভারতের মানচিত্রের পাশেই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মতো সেজে স্কুলপড়ুয়ারা ঘুরে বেড়াচ্ছে মণ্ডপে। সেখানে লেখা, ‘‘উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নাম ভারতবর্ষ। আমার, আমাদের পরিচয় ভারতবাসী।’’ একটি মডেলে আবার দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের পোশাকে বহু মানুষ। তার উপরে লেখা, ‘পোশাকে যায় না মানুষ চেনা।’ মণ্ডপের এক জায়গায় রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাবার। স্কুলের শিক্ষক শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এ দেশে মানুষের পোশাক, খাবার এবং সংস্কৃতির মধ্যে বৈচিত্র রয়েছে— মণ্ডপসজ্জায় এ সবই দেখানো হয়েছে। কিন্তু এত বৈচিত্রের মধ্যেও আমাদের সবার পরিচয় আমরা ভারতবাসী।’’
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ শহরের পার্ক সার্কাসেও চলছে রাত-দিনের অবস্থান বিক্ষোভ। সংবাদপত্র থেকে ওই সমস্ত আন্দোলন সংক্রান্ত খবরের অংশ কেটে তা দিয়ে কোলাজ বানিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছে পড়ুয়ারা। একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের কথায়, ‘‘গত তিন দিন ধরে রাত জেগে এই সব মডেল, কোলাজ বানিয়েছি। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে প্রত্যেক ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাতেই আমাদের এমন মণ্ডপসজ্জা।’’
সম্প্রীতি: সরস্বতী পুজোয় ধর্মীয় ঐক্যের বার্তা দিতে এ ভাবেই সেজেছে পড়ুয়ারা। বুধবার, স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
দক্ষিণের যাদবপুর বিদ্যাপীঠে আবার বুধবার দিনভর চলেছে মণ্ডপ সাজানোর কাজ। পড়ুয়ারা জানাল, তাদের সরস্বতী পুজো হবে আজ, বৃহস্পতিবার। সেই মণ্ডপসজ্জায় উঠে আসবে ভারতের মিশ্র সংস্কৃতি। প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভারতের শক্তিই হল তার বৈচিত্রময় সংস্কৃতি। অথচ, সেই বৈচিত্রের মধ্যেই রয়েছে ঐক্য। সেই বার্তাই দিচ্ছে আমাদের মণ্ডপসজ্জা।’’ হিন্দু স্কুল এবং বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানালেন, তাঁদের মণ্ডপে বেশ কিছু ছবির প্রদর্শনী থাকছে। সেই সমস্ত ছবি দেশের নানা প্রান্তের সংস্কৃতির পরিচয় দেবে।
আরও পড়ুন: বানানে নজর পুরসভার, তৈরি হবে ‘স্ক্রিনিং কমিটি’
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোর মণ্ডপসজ্জাতেও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করা হয়েছে। মণ্ডপে ঢোকার মুখেই রয়েছে বেশ কিছু মানুষের মুখ। সেই মুখগুলোই ওই আইনের প্রতিবাদ করছে। পিছনে একটি পোস্টারে লেখা, ‘আমরা নাগরিক।’ পাশে আর একটি পোস্টার বলছে, ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘মণ্ডপসজ্জায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যে উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষক হিসেবে গর্ব হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের পাশে রয়েছি।’’
এ দিন রবীন্দ্রভারতীর পুজোমণ্ডপে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবীন্দ্রভারতী ছাড়াও পার্থবাবু আশুতোষ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর ক্যাম্পাস ও কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসেও যান।