পরপর: শিয়ালদহ উড়ালপুলের নীচে হকারদের স্টল। নিজস্ব চিত্র
শিয়ালদহ উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়েই উড়ালপুলের তলা থেকে হকার সরানোর প্রস্তাব ছিল। উড়ালপুলের কাঠামো ঠিক রাখতে এবং বিশেষত মেরামতির সময়ে হকারদের সরানোর জন্য ফের প্রস্তাব দিয়েছে কেএমডিএ। কিন্তু তাঁদের কোথায় কী ভাবে সরানো হবে, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারা যায়নি। ফলে, মেরামতি কী ভাবে হবে তা নিয়েও কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছে। সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
তাঁর কথায়, ‘‘শিয়ালদহ উড়ালপুলের তলায় হকার নিয়ে উড়ালপুল বিশেষজ্ঞ কমিটির আপত্তি রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাঁদের কোথাও সরানো হবে না। যখন মেরামতির কাজ শুরু হবে, তখন নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাঁরা নিজেরাই কোথাও সরে যাবেন।’’
কেএমডিএ সূত্রের খবর, নগরোন্নয়ন দফতরের নির্দেশে কেএমডিএ শহরের ১৫টি উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রথম পর্যায়ে মোট আটটি সেতু এবং উড়ালপুলের পরীক্ষা হয়। তার রিপোর্টও জমা পড়েছে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে। যদিও দ্বিতীয় পর্যায়ের রিপোর্ট আসা এখনও বাকি। রিপোর্ট পর্যালোচনা করার পরেই আপাতত প্রথম পর্যায়ের আটটি সেতু এবং উড়ালপুলেরই মেরামতির নির্দেশ দেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তার মধ্যে শিয়ালদহ উড়ালপুল অন্যতম।
সমস্যা কোথায়?
উড়ালপুল বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্য জানান, এই উড়ালপুলটির বয়স প্রায় ৫০ বছর। তবে সেটির কাঠামো ভাল রয়েছে। কিন্তু কিছু মেরামতির প্রয়োজন। উড়ালপুলের নীচে মূল স্তম্ভের সঙ্গে যুক্ত করে অনেকেই অপরিকল্পিত ভাবে স্টল গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ। এর ফলে উড়ালপুলের স্তম্ভের ক্ষতি হতে পারে এবং উড়ালপুলের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা। এই বিষয়টি বাদ দিলে উড়ালপুলের নীচে হকার থাকার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে, উড়ালপুলের মেরামতির সময়ে নিরাপত্তাজনিত কারণেই হকারদের সরানো প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, এই উড়ালপুল তৈরি হওয়ার আগে শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলে অনেক হকার ছিলেন। উড়ালপুলটি তৈরি হওয়ার সময়ে তৎকালীন কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের এলাকার বাইরে স্থানান্তরিত করা হবে। সেই মতো শিয়ালদহ আদালত চত্বরের সামনে ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্ত অধিকাংশ হকার না যেতে চাওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল। পরবর্তী কালে অবশ্য এই বিষয় নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, শহরে কী ভাবে হকারেরা বসবেন তা নিয়ন্ত্রণ করার একটি পরিকল্পনা অবশ্যই রয়েছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাস্তার দুই তৃতীয়াংশ যাতায়াতের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। কোনও স্থায়ী কাঠামো করা চলবে না এবং প্লাস্টিক বা ত্রিপল ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়াও ঠেলাগাড়িতে সামগ্রী বিক্রি করতে হবে।
ন্যাশনাল হকার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শক্তিমান ঘোষ বলেন, ‘‘পরীক্ষার অনেক আগেই বহু বার শিয়ালদহ উড়ালপুলের তলা থেকে হকারদের স্থানান্তরিত করার জন্য পুরসভায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে তালিকা তৈরি করে সবাইকে বিকল্প জায়গায় স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়নি। আর সেই কারণেই প্রকল্প আটকে রয়েছে। উড়ালপুল মেরামতির সময়ে অস্থায়ী ভাবে সরলেও বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়ায় হকারদের পুরোপুরি সরানো সম্ভব নয়।’’ তবে পুরসভার নির্দেশিকা মেনেই হকারদের বসা প্রয়োজন বলেও শক্তিমানবাবু জানান।